জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

থ্রিজি টুজির দোলাচলে মোবাইল ফোন অপারেটর

http://s2.postimage.org/z8cmdzdw/image.jpg

তৃতীয় প্রজন্ম বা থ্রিজি মোবাইল ফোনের স্পেকট্রাম নিলাম থেকে এক হাজার ৫৩২ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে এটি একটি সাড়াজাগানো খবর। জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্যই চারটি কম্পানি থ্রিজি স্পেকট্রাম নিয়েছে ৪৮ দশমিক ১২ কোটি ডলার বা তিন হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। এ আয় সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশার দ্বিগুণ। মোবাইল ফোন অপারেটররা সেখানে থ্রিজি লাইসেন্স পেতে কে কত দর তুলতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। আর বর্তমানে চলছে কে কার আগে এ সেবা চালু করতে পারে, তার প্রতিযোগিতা। ভারতী এয়ারটেল এ বছরের শেষ দিকেই সেখানে এ সেবা চালু করার বিষয়ে আশাবাদী। বাংলাদেশেও এ রকম ঘটতে পারে, আশা করছে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ৭ নভেম্বর বলেছেন, তিন মাসের মধ্যেই থ্রিজি লাইসেন্স দেওয়া হবে।
কিন্তু দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা বর্তমান দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) লাইসেন্স নিয়েই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। সহজ শর্তে এ লাইসেন্স নবায়নের মাধ্যমে এই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার পর তাঁরা থ্রিজি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে চান।
দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব আবু সাইদ খানের বক্তব্য, 'আমাদের অস্তিত্ব নির্ভর করছে যে ব্যবসার ওপর, সেই টুজি মোবাইল ফোন ব্যবসারই কোনো নিশ্চয়তা নেই। চারটি অপারেটরের লাইসেন্সের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব লাইসেন্স নবায়নে কী নীতিমালা গ্রহণ করা হবে, এখন পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারছি না। এ অনিশ্চয়তার মধ্যে থ্রিজির কথা আমরা ভাবতে পারছি না।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিটিআরসির মোবাইল ফোন লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত একটি কমিটি কয়েক দিন আগে তাদের প্রতিবেদনে প্রতিটি লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ৩৫০ কোটি টাকা এবং প্রতি মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ৮০ কোটি টাকায় বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাব এখন বিটিআরসির মূল্যায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মোবাইল অপারেটরদের টুজি লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করে তারপর থ্রিজি লাইসেন্স দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। টুজি লাইসেন্স নবায়নের খসড়া গাইডলাইন এ মাসেই প্রকাশ করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত করা হবে।' কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনো বিটিআরসি বা মন্ত্রণালয় আলোচনার জন্য তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। জিয়া আহমেদ আরো বলেন, 'আগামী জুনের মধ্যেই মোবাইল ফোনের টুজি লাইসেন্স নবায়ন ও থ্রিজি লাইসেন্সসহ টেলিযোগাযোগ খাতের সব ধরনের লাইসেন্স দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন সাবমেরিন কেব্ল্ ও ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্ল্ লাইসেন্সের গাইডলাইন প্রস্তুত হয়ে গেছে। আগামী মাসে এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিওআইপি লাইসেন্সের গাইডলাইন নিয়ে কাজ চলছে। ভিওআইপি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় কিভাবে হবে, কোন পথে হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ন্যাশনাল ইন্টারনেট এঙ্চেঞ্জ, ভিওআইপি লাইসেন্স, নতুন বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডাবি্লউ), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারকানেকশন এঙ্চেঞ্জের (আইসিএঙ্) গাইডলাইন প্রস্তুতের কাজও চলছে।'
উল্লেখ্য, দেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণফোন, রবি (একটেল), বাংলালিংক ও সিটিসেলের অপারেশন লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের নভেম্বরে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব অপারেটরের লাইসেন্স নবায়নের নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ রয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান গত ১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, 'এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। আশা করছি, মার্চের মধ্যেই গাইডলাইন প্রস্তুত হয়ে যাবে। আগের দেওয়া একেকটি লাইসেন্স একেক রকমের। কয়েকটি অপারেটরকে বিনা মূল্যে ফ্রিকোয়েন্সি বা তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সব কিছুর সমন্বয় করতে হবে।' কিন্তু চেয়ারম্যানের এ বক্তব্যের পর অনেক কিছুই পাল্টে যায়। টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধন করে লাইসেন্স দেওয়া, নবায়ন এবং এ বিষয়ে গাইডলাইন প্রস্তুতের ক্ষমতা বিটিআরসির পরিবর্তে দেওয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে।

থ্রিজি নিয়ে আগের ঘোষণা
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে এরিকসন থ্রিজি মোবাইল ফোনের পরীক্ষামূলক নেটওয়ার্ক স্থাপন করে এবং ওই বছরের ১০ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে এর কার্যকারিতা প্রদর্শন করে। বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০০৯ সালের মার্চে এ প্রযুক্তি বাংলাদেশে চালু হয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই তিনি বিটিআরসি থেকে বিদায় নেন। এরপর বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে জিএসএম অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সেমিনারে ঘোষণা দেন, 'এ বছরের জুনেই আমরা থ্রিজি লাইসেন্স দিতে যাচ্ছি। এর ফলে দেশে মোবাইল ব্রডব্যান্ড, তথা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হবে।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন