বেশি দিন হয়নি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মহাসড়কগুলোতে গাড়ির ভয়ংকর জট বেঁধে সমস্যা তৈরি হচ্ছে খুব—আমি এ সমস্যার কথাই পড়ছিলাম, যা পুরো শহরকে স্থবির করে দিচ্ছে। লাখ লাখ গাড়ি আর মানুষের গতি থেমে অচল হয়ে যাচ্ছে জীবনযাত্রা। সময়ের অপচয়, শক্তির ক্ষয় এবং পরিবেশের জন্য যা ভয়াবহ হুমকি। কিছু উদ্যমী মানুষ গাড়ির এই জটকে কম্পিউটারে নমুনাচিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছিল, ঠিক কতগুলো গাড়িকে সরিয়ে নিলে জট দূর হয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল সম্ভব হবে। কতগুলো গাড়িকে সরিয়ে নিলে একটি কুড়ি মাইলের দূরত্ব দুই ঘণ্টার পরিবর্তে মাত্র ২৫ মিনিটে পৌঁছানো যাবে? চমৎকার ছিল সেই ফলাফল।
প্রতি শতকে মাত্র চারটি গাড়িকে সরিয়ে নিলেই গাড়ির এই জটকে সহজে সরানো যাবে। প্রতি শত থেকে চারটি, প্রতি হাজার থেকে ৪০টি। প্রতি ১০০ থেকে চারটি গাড়ি কিন্তু সংখ্যায় অনেক নয়—প্রতি ৫০ থেকে দুটি; প্রতি ২৫টি গাড়ির চালক থেকে একজন।
আমরা একে বলতে পারি চারের শক্তি। ভেবে দেখো, প্রতি ১০০তে আমরা মাত্র চারজন কি আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারি।
চারের এই শক্তিতে তুমি কাজে লাগাতে পারো তোমার আগ্রহের যেকোনো ক্ষেত্রে। রাজনীতিতে প্রতি ১০০ থেকে চারটি ভোট হার-জিতের পার্থক্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সংস্কৃতি—সেখানেও প্রতি ৫০ জনের মধ্যে দুজনের কেনা টিকিট একটি স্বল্প বাজেটের ছবিকে লাভজনক বানাতে পারে। অর্থনীতিতে প্রত্যেক ২৫ জন ক্রেতা থেকে একজন ক্রেতার নির্দিষ্ট একটি পণ্য বয়কটের মধ্য দিয়ে পণ্যটির বাজার-চাহিদাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রতি ১০০ থেকে চারটি কিন্তু একেবারেই সামান্য, তুচ্ছ অথচ সেটাই এক বিশালত্বের জন্ম দিয়ে দেয়। চারের এই শক্তিই সহায় আর অসহায়ের মধ্যকার পার্থক্য এনে দিতে পারে।
এ বছর ২০০৫ সালে যারা স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে, তারা নিশ্চিতভাবেই দাবি করতে পারে, অন্য সব ব্যাচ থেকে তারা কীভাবে পৃথিবীকে উন্মত্ত হয়ে যেতে দেখেছে। ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেনের পর আমাদের ধরিত্রী-মাতা এবং যুক্তরাষ্ট্র যেন দুটি ভিন্ন জগতে পরিণত হয়েছিল— আমাদের কথায়, সহিষ্ণুতায়, শান্তি ও যুদ্ধের অন্বেষণে, মতবাদ ও আদর্শের মধ্য দিয়ে। ২০০৫-এর এই বসন্তের দিনটি অন্য রকম। স্নাতকধারী আজকের শিক্ষার্থী হিসেবে তোমরা বাস করছ নতুন এক পৃথিবীতে, নতুন ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে, বৈশ্বিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, ধর্মীয় বিভেদের মধ্যে। আজ আমাদের মূল উদ্দেশ্য, এই সমাজে তোমাদের প্রবেশের ক্ষণটিকে উদ্যাপন করা। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, তোমরা ইতিমধ্যে সমাজের অনেকখানি ভেতরে প্রবেশ করে ফেলেছ। কেউই তোমরা নাইন-ইলেভেনের ঘটনার প্রভাব থেকে অপরিচিত নও, মুক্ত নও।
মাথায় স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার টুপি পরে, হাতে ডিগ্রির কাগজখানা নিয়ে সাধারণভাবেই গৎবাঁধা একটি প্রশ্ন মনে আসতে পারে, ‘কী করব এখন আমি।’ হয়তো এমনটাই গত চার বছরে তোমাদের বারবার মনে এসেছে। আজকের এই দিনে সাধারণত বক্তাদের কাছ থেকে আশা করা হয়, তাদের কাছে যদি কোনো উপদেশ পাওয়া যায়, যা তোমাদের জীবনকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এ ‘উপদেশ’ জিনিসটি অনেক বিভ্রান্তিকর, উচ্চ স্বরের এবং বিপজ্জনকও বটে। আমি কোনো উপদেশ দিতে চাই না, এটি শুধুই একটি অনুরোধ। পরামর্শ ঠিক নয়, একটি ছুতো আর কি। ইংরেজিতে চারটি বর্ণের একটি শব্দ ‘হেল্প’ (এইচ-ই-এল-পি)। সহায়তা। সাহায্য।
আমাদের প্রয়োজন সহায়তা, তোমাদের সাহায্য। তোমাদের এগিয়ে আসতেই হবে। প্লিজ, সাহায্য করো, তোমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও। সাহায্য প্রদানের জন্য আগ্রহী হও। এতে তোমার জীবনে, পথে-প্রান্তরে, শহরে-বন্দরে, দেশে এবং পুরো পৃথিবীতে পরিবর্তন আসবে। যদি কেবল চারজন থেকে মাত্র একজন, ১০০ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই কেবল চারজন কোনো একটি দিনে, কোনো একটি বিশেষ কারণে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসো, তবে তোমাদের এ পৃথিবীর অবিশ্বাস্য পরিবর্তন চলে আসবে।
সাহায্য করো প্রকাশ্যে কিংবা অগোচরে। কোনো কিছুর পরিবর্তনে, রক্ষায় এবং সংরক্ষণে। সাহায্য করো তোমার মনকে, সেখানে আসুক যুক্তি, আসুক বিতর্ক ও আলোচনার প্রতি শ্রদ্ধা। তোমাকে সব সময়ই সাহায্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
এগিয়ে যাও। শান্তি এনে দাও সেখানে, যেখানে শান্তি অনেক মূল্যবান। প্রকৃতিকে সাহায্য করো। বৈচিত্র্যকে আপন করে নাও, বিভেদকে করো জয়।
চারের শক্তি দিয়ে প্রতি ১০০ সমস্যার চারটি সমাধানে এগিয়ে যাও। তবেই আমরা বাঁচাতে পারব এ বিশ্বকে। আমরা সাহায্য না করলে যা কখনোই সম্ভব হবে না।
অভিনন্দন রইল সবার জন্য। ধন্যবাদ।
সূত্র: অনলাইন স্পিচ ব্যাংক। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: শিখ্তী সানী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন