প্রায় কুড়ি বছর আগের কথা। লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। ফ্লাইটটি যথারীতি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে প্রায় আট ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছিল। মাঝখানে দুবাইয়ে ঘণ্টা দুয়েকের যাত্রাবিরতি। তারপর আবার ঢাকার উদ্দেশে উড়ল। সে সময় বিমানের অভ্যন্তরীণ সেবার মান মোটামুটি ভালো ছিল। খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে বিমানের স্মার্ট বিমানবালা জানতে চাইলেন, ডিউটি ফ্রি কিছু কিনতে চাই কিনা! তখন আমি একজন নিয়মিত ধূমপায়ী। দশ ডলার দিয়ে কিনলাম এক কার্টন বিদেশী ব্র্যান্ডের সিগারেট। ঢাকা বিমানবন্দরে শুল্ক কর্তৃপক্ষ তা বাজেয়াপ্ত করল এই বলে যে, বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীর বিদেশী সিগারেট দেশে আনা নিষিদ্ধ। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি, সিগারেট আমার কাছে বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ শুল্কমুক্ত দোকানই বিক্রি করেছে। তারা আমাকে কখনও বলেনি, বাংলাদেশী পাসপোর্ট হলে এ সিগারেট নেয়া যাবে না। বিমানবন্দরে সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে অনেক সময় শুল্ক কর্তৃপক্ষকে সহজ কথাও বোঝানো সম্্ভব নয়। তাদের সোজাসাপ্টা উত্তর, কোথা থেকে কিনলেন, কারা বিক্রি করল, তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। সিগারেট আপনি নিয়ে যেতে পারবেন না। এসব বিষয়ে আমি সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নই। তর্ক হয় বেশ কিছুক্ষণ। লাভ হয় না কিছুই। শেষতক শখের ওই সিগারেটের কার্টনটা শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হই। এতদূর পড়ার পর পাঠক মনে করতে পারেন, আমি বুঝি বাংলাদেশ বিমান বা বিমানবন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে কিছু একটা লিখতে বসেছি। না, তেমনটি নয়। বিষয়টি হচ্ছে বহুল আলোচিত, সমালোচিত, নিন্দিত ‘শিক্ষাবাণিজ্য’ বিষয়ক।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভোরের ডাক পত্রিকা ২ ডিসেম্বরে প্রথম পৃষ্ঠায় চার কলামের শীর্ষ খবর হিসেবে ‘ব্রিটেনে ৬৩ হাজার বাংলাদেশী ছাত্রের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত’ একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদে বলা হয়েছে, সে দেশ থেকে হাজার হাজার বিদেশী ছাত্রকে বিদায় করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকার। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নন-ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়নরত বাংলাদেশসহ অন্তত ৯০ হাজার বিদেশী শিক্ষার্থীর ভিসা আর ব্রিটিশ সরকার নবায়ন করবে না। ব্রিটিশ হাইকমিশনের বরাত দিয়ে সংবাদটিতে এও উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রিটেনে অবস্থানরত বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর আনুমানিক ৭০ শতাংশই নন-ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়ন করছে। সেদেশের সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্রিটেনে অধ্যয়নরত প্রায় ৬৩ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হলে হাজার হাজার বিদেশী ছাত্র, যারা ‘উচ্চশিক্ষা লাভের’ উদ্দেশ্যে বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে বৈধভাবে শখের বিলেত যাত্রা করেছিল, তাদের নিজ দেশে ফিরতে হবে সবকিছু অসমাপ্ত রেখে। এটি কুড়ি বছর আগে বৈধভাবে বিমানের শুল্কমুক্ত বিপণি থেকে আমার সিগারেট ক্রয় করে ফ্যাসাদে পড়ার অবস্থা আর কী।
যেসব ছাত্রকে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে সে দেশ ছাড়তে হবে, তারা কেউই জাল ভিসা নিয়ে সে দেশে যায়নি। সেটি সম্্ভবও নয়। সব ছাত্র বৈধ ভিসা নিয়েই সে দেশে প্রবেশ করেছে এবং সে ভিসা পাওয়ার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। বিরাট অংকের ভিসা ফিসহ নানা কিসিমের কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছে। তাদের সহায়তা করেছে এ দেশে কার্যরত সেদেশেরই একটি সরকারি সংস্থা এবং ব্রিটেনের অনেক নন-ডিগ্রি গ্রান্টিং কলেজ, তার অনেকগুলোর প্রচলিত নাম ‘ভিসা কলেজ’। এদের কারও কারও আবার ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে সহায়ক অফিসও আছে। এসব কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিরতি দিয়ে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে যায়, পত্রপত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়, বলে কাগজপত্র নিয়ে আস, স্পট এডমিশন নাও এবং আমার সঙ্গে চল। এরকম একটি ব্যবস্থাকে আমি আগে আমার একটি লেখায় আমাদের বাপ-দাদাদের আমলের সৌদি আরব থেকে হজের মৌসুমে আসা মোয়াল্লেম ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছিলাম। সে সময় হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে হাজী সাহেবানদের সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হতে হতো। তারও আগে যেতে হতো মুম্বাই হয়ে। সেখান থেকে জেদ্দা। সময় লাগত প্রায় এক মাস। সে সময় সৌদি আরব থেকে মোয়াল্লেমরা এসে চট্টগ্রাম বা মুম্বাইয়ে অফিস খুলে হাজী সাহেবদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করে একটা ফি নিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে যেত। তখন সৌদি আরব কোন তেলসম্পদ সমৃদ্ধ দেশ নয়। হজ মৌসুমের আয়টাই তাদের প্রধান আয়। ব্রিটেনে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার নামে (যারা বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশে ছাত্র আনতে যায়) তাদের অবস্থাও এখন অনেকটা সেরকম। যে ছাত্রদের তারা সেদেশ থেকে বের করে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে, তারা কিন্তু একটা বড় অংকের অর্থ সেদেশে নিয়ে গেছে, খরচও করেছে। সহজ কথায়, তারা সে দেশের অর্থনীতিতে সামান্য হলেও অবদান রেখেছে।
১৯৯৮-২০০০ সালে আমি লন্ডনের অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য ছিলাম। সে সময় অ্যাসোসিয়েশন যেসব কলেজ নন-ডিগ্রি কলেজের নামে শিক্ষাবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল, সে বিষয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। এদের তখনও বলা হতো ভিসা কলেজ, এখনও তা বলা হয়। ২০০০ সালে এর সংখ্যা ছিল ১৬০, পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দেড় হাজারে উন্নীত হয়। এটি বেশি বৃদ্ধি পায় যুক্তরাষ্ট্রের এক/এগারোর পরে। যখন সে দেশে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের কিছু ব্যক্তি, যাদের অধিকাংশের সঙ্গে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই, তারা এসব কলেজ খুলে বসে। এসব কলেজের বেশিরভাগই অভিবাসী (যেমন- পূর্ব লন্ডন, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম) অধুøষিত এলাকায় অবস্থিত। কলেজ মানে কোন একটা ভবন বা দোকান বা রেস্টুরেন্টের ওপর দু’খানা ছোট আকারের কামরা। এগুলোর প্রায় কোনটাতেই কোন ফুলটাইম শিক্ষক নেই। নাম হয় বেশ বাহারি। কেউ কিন্তু ডিগ্রি দিতে পারে না। দিতে পারে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট। কোন কোনটির সঙ্গে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা আছে। একটি পর্যায়ের পর, (সাধারণত দুই বছর) সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে একজন কলেজ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। তবে বাস্তবে তা কদাচিৎ ঘটে। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ও তেমন কোন উঁচুমানের বিশ্ববিদ্যালয় নয়। ব্রিটেনে এখনও পর্যন্ত শুধু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে ভর্তি হতে গেলে অনেক টাকা লাগে। কলেজগুলোতে ভর্তি হতে সাধারণত এক সেমিস্টারে (চার-সাড়ে চার মাস) তিন হাজার পাউন্ড দিতে হয়। অন্যান্য খরচও আছে। সঙ্গে আছে থাকা-খাওয়ার খরচ। একজন ছাত্র সপ্তাহে কুড়ি ঘণ্টা কাজ করতে পারে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সে সুযোগও বেশ সীমিত। ছাত্রভিসা নবায়ন করতে হলে কলেজের একটা প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হয়। সেটা নিতে গেলেও আবার মোটা অংকের অর্থ দিতে হয়। যেহেতেু এসব কলেজের ছাত্ররা বেশিরভাগ সময়ই কাজ খঁুজতে ব্যস্ত থাকে অথবা কোন একটা বাঙালি রেস্টুরেন্টে স্বল্প আয়ে কাজ করতেই সময় ব্যয় করে, সেহেতু তারা নিয়মিত ক্লাসও করতে পারে না। সুতরাং তাদের বেলায় প্রত্যয়নপত্রের জন্য ফিও দিতে হয় বেশি। সবকিছু মিলিয়ে পুরো বিষয়টা নিয়ে একটা প্রতারণার জালে আটকে যায় বিদেশী ছাত্ররা। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। তবে সেরকম কলেজের সংখ্যা হাতে গোনা যায়।
দেরিতে হলেও ব্রিটিশ সরকার বিষয়টার গুরুত্ব কিছুটা উপলব্ধি করেছে এবং বিগত চার-পাঁচ বছরে এরকম প্রায় সাতশ’ কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তারা শিক্ষার নামে মূলত আদম ব্যবসা করে আসছিল। তবে তা যদি তারা স্বীকারই করে তাহলে তারা এসব কলেজে সরল বিশ্বাসে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের শুরুতে স্টুডেন্ট ভিসা দিয়েছিল কেন? অতএব পুরো প্রতারণা ব্যবস্থায় ব্রিটেন সরকারের সম্পৃক্ততা তারা অস্বীকার করে কিভাবে? বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়মিত বিরতি দিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনেকটা ঢালওভাবে কঠোর সমালোচনা করে। এর মধ্যে ঠিক হয়েছে অনেকগুলোকে নাকি চরমপত্র দেয়া হবে। এটি অবশ্য অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মনীতি মানছে না, শিক্ষার মান ভালো নয়, সার্টিফিকেট বিক্রি করে ইত্যাদি। এগুলোর ক্রেতার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যাও কম নয়। কারণ একটা ডিগ্রির সনদ জোগাড় করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ সহজ হয় বলে ধারণা। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিম্নমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্্ভবত বিলেতের এসব তথাকথিত কলেজের চেয়ে ভালো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এসব কলেজের ক্ষেত্রে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করে না। তবে সরকার ইতিমধ্যে দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষামেলার নামে ব্যবসায়িক ফাঁদ পাতা নিষিদ্ধ করার একটা উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যারাই জড়িত, নিশ্চিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে প্রশংসা করবেন তারা। তবে খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপটা শুধু নির্দেশেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে।
এ সত্যটি নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না। যেসব ছাত্র বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে উচ্চশিক্ষার নামে উল্লিখিতভাবে বিলাত যাত্রা করে, বর্তমান অবস্থায় তাদের প্রতারিত হওয়ার সম্্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। ক’দিন আগে ঢাকার একটি ভুয়া ফরেন এডুকেশন কনসালটেন্ট বাংলাদেশী ছাত্রদের কাছ থেকে পনেরো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে, ঠিক যেমনটা ঘটে আদম বেপারিদের ক্ষেত্রে। এসব জালজোচ্চুরি বন্ধ করতে হলে উভয় দেশের সরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ব্রিটেনকে মনে রাখতে হবে, এটি এখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুগ নয়। আপনারা হাজার হাজার বিদেশী ছাত্রকে স্টুডেন্ট ভিসা দিয়ে (বিরাট অংকের অর্থের বিনিময়ে) নিজ দেশে নিয়ে যাবেন এবং তারা সেখানে নিম্নমানের কালেজে ভর্তি হবে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে, যার অনুমোদন ব্রিটিশ সরকার দিয়েছে এবং কিছ- সময় পর সেসব ছাত্রকে ব্রিটেন ত্যাগে বাধ্য করবেন, এটা তো কোন সৎ উদ্দেশ্যের কাজ হতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্যে বা মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারিত হয়ে যেমন অনেক শ্রমিক সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে আসে, বিলেত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও অনেকটা সেরকম অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি বন্ধ করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে, বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশে এখন প্রায় একান্ন ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে সুযোগটা না থাকলে হয়তো এদের অনেকেই বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হতো। সুতরাং এখন সরকারকে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা নিয়ে প্রতারণার কথা না বললে লেখাটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র বাজার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলে সে দেশে টাকা দিলে সবকিছু পাওয়া যায়। ডিগ্রিও সহজলভ্য। অবশ্য তা কোন প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয়। এগুলোকে বলা হয় ব্রিফকেস বা অ্যাপার্টমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকটা ব্রিটেনের কলেজগুলোর মতো, তবে তাদের কাজ করার ধরন আলাদা। ডিজিটাল যুগে তারা অনলাইনে ডিগ্রি দেয়। একেবারে সরাসরি পিএইচডি পেতে পারে যে কেউ। পাঁচ থেকে দশ হাজার ডলার খরচ করে নাম নিবন্ধন করতে হয়। বিএ, এমএ ডিগ্রির জন্য রেট একটু কম। বছরখানেক পর দেখা যাবে, যে মানুষটিকে আপনি কখনও লেখাপড়া নিয়ে কোন কথা বলতে শোনেননি তিনি হঠাৎ করে নামের পাশে বিরাট করে ‘ডক্টর’ লিখছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে জানান দিচ্ছেন। আসলে শিক্ষা নিয়ে জালিয়াতি বা বাণিজ্য এখন সারা দুনিয়াতেই হচ্ছে। সব শেষে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সাফল্য কামনা করি এবং আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ ব্যাপারে একটা জোরালো ভূমিকা রাখবে। তাতে অন্তত এদেশের কিছু মানুষ প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবে এবং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে পাচার বন্ধ হবে। যারা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে উচ্চশিক্ষার্থে নিজ সন্তানকে বিদেশ পাঠাবেন বলে ঠিক করেছেন, তা করার আগে ভালো করে খোঁজখবর নিন, যথাযথ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনার সন্তানটিকে পাঠাচ্ছেন কিনা! না হয় প্রতারিত হওয়ার যথেষ্ট সম্্ভাবনা রয়েছে।
আবদুল মান্নানঃ শিক্ষক, ইউল্যাব, ঢাকা, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভোরের ডাক পত্রিকা ২ ডিসেম্বরে প্রথম পৃষ্ঠায় চার কলামের শীর্ষ খবর হিসেবে ‘ব্রিটেনে ৬৩ হাজার বাংলাদেশী ছাত্রের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত’ একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদে বলা হয়েছে, সে দেশ থেকে হাজার হাজার বিদেশী ছাত্রকে বিদায় করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকার। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নন-ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়নরত বাংলাদেশসহ অন্তত ৯০ হাজার বিদেশী শিক্ষার্থীর ভিসা আর ব্রিটিশ সরকার নবায়ন করবে না। ব্রিটিশ হাইকমিশনের বরাত দিয়ে সংবাদটিতে এও উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রিটেনে অবস্থানরত বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর আনুমানিক ৭০ শতাংশই নন-ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়ন করছে। সেদেশের সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্রিটেনে অধ্যয়নরত প্রায় ৬৩ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হলে হাজার হাজার বিদেশী ছাত্র, যারা ‘উচ্চশিক্ষা লাভের’ উদ্দেশ্যে বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে বৈধভাবে শখের বিলেত যাত্রা করেছিল, তাদের নিজ দেশে ফিরতে হবে সবকিছু অসমাপ্ত রেখে। এটি কুড়ি বছর আগে বৈধভাবে বিমানের শুল্কমুক্ত বিপণি থেকে আমার সিগারেট ক্রয় করে ফ্যাসাদে পড়ার অবস্থা আর কী।
যেসব ছাত্রকে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে সে দেশ ছাড়তে হবে, তারা কেউই জাল ভিসা নিয়ে সে দেশে যায়নি। সেটি সম্্ভবও নয়। সব ছাত্র বৈধ ভিসা নিয়েই সে দেশে প্রবেশ করেছে এবং সে ভিসা পাওয়ার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। বিরাট অংকের ভিসা ফিসহ নানা কিসিমের কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছে। তাদের সহায়তা করেছে এ দেশে কার্যরত সেদেশেরই একটি সরকারি সংস্থা এবং ব্রিটেনের অনেক নন-ডিগ্রি গ্রান্টিং কলেজ, তার অনেকগুলোর প্রচলিত নাম ‘ভিসা কলেজ’। এদের কারও কারও আবার ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে সহায়ক অফিসও আছে। এসব কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিরতি দিয়ে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে যায়, পত্রপত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়, বলে কাগজপত্র নিয়ে আস, স্পট এডমিশন নাও এবং আমার সঙ্গে চল। এরকম একটি ব্যবস্থাকে আমি আগে আমার একটি লেখায় আমাদের বাপ-দাদাদের আমলের সৌদি আরব থেকে হজের মৌসুমে আসা মোয়াল্লেম ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছিলাম। সে সময় হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে হাজী সাহেবানদের সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হতে হতো। তারও আগে যেতে হতো মুম্বাই হয়ে। সেখান থেকে জেদ্দা। সময় লাগত প্রায় এক মাস। সে সময় সৌদি আরব থেকে মোয়াল্লেমরা এসে চট্টগ্রাম বা মুম্বাইয়ে অফিস খুলে হাজী সাহেবদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করে একটা ফি নিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে যেত। তখন সৌদি আরব কোন তেলসম্পদ সমৃদ্ধ দেশ নয়। হজ মৌসুমের আয়টাই তাদের প্রধান আয়। ব্রিটেনে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার নামে (যারা বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশে ছাত্র আনতে যায়) তাদের অবস্থাও এখন অনেকটা সেরকম। যে ছাত্রদের তারা সেদেশ থেকে বের করে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে, তারা কিন্তু একটা বড় অংকের অর্থ সেদেশে নিয়ে গেছে, খরচও করেছে। সহজ কথায়, তারা সে দেশের অর্থনীতিতে সামান্য হলেও অবদান রেখেছে।
১৯৯৮-২০০০ সালে আমি লন্ডনের অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য ছিলাম। সে সময় অ্যাসোসিয়েশন যেসব কলেজ নন-ডিগ্রি কলেজের নামে শিক্ষাবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল, সে বিষয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। এদের তখনও বলা হতো ভিসা কলেজ, এখনও তা বলা হয়। ২০০০ সালে এর সংখ্যা ছিল ১৬০, পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দেড় হাজারে উন্নীত হয়। এটি বেশি বৃদ্ধি পায় যুক্তরাষ্ট্রের এক/এগারোর পরে। যখন সে দেশে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের কিছু ব্যক্তি, যাদের অধিকাংশের সঙ্গে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই, তারা এসব কলেজ খুলে বসে। এসব কলেজের বেশিরভাগই অভিবাসী (যেমন- পূর্ব লন্ডন, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম) অধুøষিত এলাকায় অবস্থিত। কলেজ মানে কোন একটা ভবন বা দোকান বা রেস্টুরেন্টের ওপর দু’খানা ছোট আকারের কামরা। এগুলোর প্রায় কোনটাতেই কোন ফুলটাইম শিক্ষক নেই। নাম হয় বেশ বাহারি। কেউ কিন্তু ডিগ্রি দিতে পারে না। দিতে পারে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট। কোন কোনটির সঙ্গে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা আছে। একটি পর্যায়ের পর, (সাধারণত দুই বছর) সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে একজন কলেজ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। তবে বাস্তবে তা কদাচিৎ ঘটে। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ও তেমন কোন উঁচুমানের বিশ্ববিদ্যালয় নয়। ব্রিটেনে এখনও পর্যন্ত শুধু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে ভর্তি হতে গেলে অনেক টাকা লাগে। কলেজগুলোতে ভর্তি হতে সাধারণত এক সেমিস্টারে (চার-সাড়ে চার মাস) তিন হাজার পাউন্ড দিতে হয়। অন্যান্য খরচও আছে। সঙ্গে আছে থাকা-খাওয়ার খরচ। একজন ছাত্র সপ্তাহে কুড়ি ঘণ্টা কাজ করতে পারে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সে সুযোগও বেশ সীমিত। ছাত্রভিসা নবায়ন করতে হলে কলেজের একটা প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হয়। সেটা নিতে গেলেও আবার মোটা অংকের অর্থ দিতে হয়। যেহেতেু এসব কলেজের ছাত্ররা বেশিরভাগ সময়ই কাজ খঁুজতে ব্যস্ত থাকে অথবা কোন একটা বাঙালি রেস্টুরেন্টে স্বল্প আয়ে কাজ করতেই সময় ব্যয় করে, সেহেতু তারা নিয়মিত ক্লাসও করতে পারে না। সুতরাং তাদের বেলায় প্রত্যয়নপত্রের জন্য ফিও দিতে হয় বেশি। সবকিছু মিলিয়ে পুরো বিষয়টা নিয়ে একটা প্রতারণার জালে আটকে যায় বিদেশী ছাত্ররা। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। তবে সেরকম কলেজের সংখ্যা হাতে গোনা যায়।
দেরিতে হলেও ব্রিটিশ সরকার বিষয়টার গুরুত্ব কিছুটা উপলব্ধি করেছে এবং বিগত চার-পাঁচ বছরে এরকম প্রায় সাতশ’ কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তারা শিক্ষার নামে মূলত আদম ব্যবসা করে আসছিল। তবে তা যদি তারা স্বীকারই করে তাহলে তারা এসব কলেজে সরল বিশ্বাসে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের শুরুতে স্টুডেন্ট ভিসা দিয়েছিল কেন? অতএব পুরো প্রতারণা ব্যবস্থায় ব্রিটেন সরকারের সম্পৃক্ততা তারা অস্বীকার করে কিভাবে? বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়মিত বিরতি দিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনেকটা ঢালওভাবে কঠোর সমালোচনা করে। এর মধ্যে ঠিক হয়েছে অনেকগুলোকে নাকি চরমপত্র দেয়া হবে। এটি অবশ্য অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মনীতি মানছে না, শিক্ষার মান ভালো নয়, সার্টিফিকেট বিক্রি করে ইত্যাদি। এগুলোর ক্রেতার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যাও কম নয়। কারণ একটা ডিগ্রির সনদ জোগাড় করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ সহজ হয় বলে ধারণা। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিম্নমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্্ভবত বিলেতের এসব তথাকথিত কলেজের চেয়ে ভালো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এসব কলেজের ক্ষেত্রে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করে না। তবে সরকার ইতিমধ্যে দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষামেলার নামে ব্যবসায়িক ফাঁদ পাতা নিষিদ্ধ করার একটা উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যারাই জড়িত, নিশ্চিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে প্রশংসা করবেন তারা। তবে খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপটা শুধু নির্দেশেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে।
এ সত্যটি নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না। যেসব ছাত্র বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে উচ্চশিক্ষার নামে উল্লিখিতভাবে বিলাত যাত্রা করে, বর্তমান অবস্থায় তাদের প্রতারিত হওয়ার সম্্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। ক’দিন আগে ঢাকার একটি ভুয়া ফরেন এডুকেশন কনসালটেন্ট বাংলাদেশী ছাত্রদের কাছ থেকে পনেরো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে, ঠিক যেমনটা ঘটে আদম বেপারিদের ক্ষেত্রে। এসব জালজোচ্চুরি বন্ধ করতে হলে উভয় দেশের সরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ব্রিটেনকে মনে রাখতে হবে, এটি এখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুগ নয়। আপনারা হাজার হাজার বিদেশী ছাত্রকে স্টুডেন্ট ভিসা দিয়ে (বিরাট অংকের অর্থের বিনিময়ে) নিজ দেশে নিয়ে যাবেন এবং তারা সেখানে নিম্নমানের কালেজে ভর্তি হবে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে, যার অনুমোদন ব্রিটিশ সরকার দিয়েছে এবং কিছ- সময় পর সেসব ছাত্রকে ব্রিটেন ত্যাগে বাধ্য করবেন, এটা তো কোন সৎ উদ্দেশ্যের কাজ হতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্যে বা মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারিত হয়ে যেমন অনেক শ্রমিক সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে আসে, বিলেত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও অনেকটা সেরকম অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি বন্ধ করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে, বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশে এখন প্রায় একান্ন ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে সুযোগটা না থাকলে হয়তো এদের অনেকেই বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হতো। সুতরাং এখন সরকারকে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা নিয়ে প্রতারণার কথা না বললে লেখাটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র বাজার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলে সে দেশে টাকা দিলে সবকিছু পাওয়া যায়। ডিগ্রিও সহজলভ্য। অবশ্য তা কোন প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয়। এগুলোকে বলা হয় ব্রিফকেস বা অ্যাপার্টমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকটা ব্রিটেনের কলেজগুলোর মতো, তবে তাদের কাজ করার ধরন আলাদা। ডিজিটাল যুগে তারা অনলাইনে ডিগ্রি দেয়। একেবারে সরাসরি পিএইচডি পেতে পারে যে কেউ। পাঁচ থেকে দশ হাজার ডলার খরচ করে নাম নিবন্ধন করতে হয়। বিএ, এমএ ডিগ্রির জন্য রেট একটু কম। বছরখানেক পর দেখা যাবে, যে মানুষটিকে আপনি কখনও লেখাপড়া নিয়ে কোন কথা বলতে শোনেননি তিনি হঠাৎ করে নামের পাশে বিরাট করে ‘ডক্টর’ লিখছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে জানান দিচ্ছেন। আসলে শিক্ষা নিয়ে জালিয়াতি বা বাণিজ্য এখন সারা দুনিয়াতেই হচ্ছে। সব শেষে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সাফল্য কামনা করি এবং আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ ব্যাপারে একটা জোরালো ভূমিকা রাখবে। তাতে অন্তত এদেশের কিছু মানুষ প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবে এবং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে পাচার বন্ধ হবে। যারা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে উচ্চশিক্ষার্থে নিজ সন্তানকে বিদেশ পাঠাবেন বলে ঠিক করেছেন, তা করার আগে ভালো করে খোঁজখবর নিন, যথাযথ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনার সন্তানটিকে পাঠাচ্ছেন কিনা! না হয় প্রতারিত হওয়ার যথেষ্ট সম্্ভাবনা রয়েছে।
আবদুল মান্নানঃ শিক্ষক, ইউল্যাব, ঢাকা, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন