সবার জন্য মাইক্রোওয়ার্কারস
মাইক্রোওয়ার্কারস নিয়ে ব্লগে এর আগেও একটি লেখা লিখেছিলাম। এবার "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের পাঠকদের জন্য আরেকটু বিস্তারিতভাবে সাইটটি নিয়ে বর্ণনা করলাম।
ডাটা এন্ট্রি কাজ যারা করেন তারা ভালভাবেই জানেন যে একটি ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া কতটা কঠিন। কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার জানলেই এ ধরনের কাজ করা যায়। এজন্য প্রায় প্রতিটি মার্কেটপ্লেসে এক একটি ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্ট করতে শত শত আবেদন পড়ে। এদের মধ্য থেকে সুনির্দিষ্ট একজনকে বেছে নিতে ক্লায়েন্টদেরকে স্বীদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়। প্রথম কাজ পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কিছুদিন বিড করার পর কাজ না পেয়ে শেষে ফ্রিল্যান্সিং করার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেন। আজকে যে ওয়েবসাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব তাতে কাজ করার জন্য কোন বিড বা আবেদন করতে হয় না। অর্থাৎ ইচ্ছে করলে এই মূহুর্ত থেকে কাজ শুরু করে দেয়া যায়। আর কাজগুলোও অত্যন্ত সহজ। সাইটটি হচ্ছে মাইক্রোওয়ার্কারস (www.microworkers.com)।
প্রথম দর্শনেই সাইটটিকে সহজবোধ্য মনে হবে। মাইক্রোওয়ার্কারস সাইটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই সাইটের কাজগুলো অত্যন্ত ছোট ছোট। এক একটি কাজ করতে ৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। প্রতিটি কাজের মূল্য ০.১০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৭৫ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাইটে প্রতিদিনই নতুন নতুন কাজ আসে। এখানে একটি কাজ কেবলমাত্র একবারই করা যায়। মোট আয় ৯ ডলার হলেই চেক, মানিবুকার্স, পেপাল এবং এলার্টপে সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তোলন যায়।
মাইক্রোওয়ার্কারস সাইটে একজন ফ্রিল্যান্সারকে Worker এবং এবং একজন ক্লায়েন্টকে Employer হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাইটে এই দুই ধরনের ব্যবহারকারী কিভাবে কাজ করে তা নিচের কার্টুনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে-
Worker হিসেবে কাজ শুরু করার পূর্বে প্রথমে সাইটে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর মেনু থেকে Available Jobs লিংকে ক্লিক করে সকল কাজগুলো দেখা যাবে। প্রতিটি কাজের শিরোনামের সাথে কয়েকটি তথ্য পাওয়া যায় - কাজের মূল্য (Payment), শতকরা কতজনের কাজ ক্লায়েন্ট গ্রহণ করেছে (Success Rate), কাজটি করতে আনুমানিক কত মিনিট লাগতে পারে (Time), কতজন এ পর্যন্ত কাজটি করছে (Done) ইত্যাদি। কোন একটি কাজের শিরোনামের উপর ক্লিক করে সেই কাজের বিস্তারিত আরো তথ্য জানা যাবে। এর মধ্যে "What is expected from workers?" অংশ থেকে কাজের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যাবে। কাজটি যে আপনি যথাযথভাবে শেষ করেছেন তা প্রমাণ দিতে কি কি তথ্য প্রদান করতে হবে তা "Required proof that task was finished?" অংশের মাধ্যমে জানা যাবে। সবশেষে "I accept this job " লিংকে ক্লিক করে একটি টেক্সটবক্সে আপনার কাজের প্রমাণগুলো দিতে হবে। কোন কাজ করতে না পারলে "Not interested in this job" লিংকে ক্লিক করে বের হয়ে যাওয়াই ভাল, সেক্ষেত্রে এই কাজটি আপনার "Available Jobs" পাতায় আর কখনও দেখাবে না।
আমাদের দেশের অনেক ফ্রিল্যান্সাররা ইতিমধ্যে এই সাইটে কাজ করছেন এবং তারা সাইট থেকে নিয়মিত টাকা পাচ্ছেন। তবে একটা বাস্তব সত্য হচ্ছে এই সাইট থেকে খুব বেশি পরিমাণে আয় করা যায় না। যারা পড়ালেখা বা অন্য কাজের পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে বাড়তি আয় করতে চান তাদের জন্য এই সাইট অবশ্যই আয়ের একটি ভাল উপায় হতে পারে। এই সাইটের জনপ্রিয়তা এত বেশি যে, ইদানিংকালে এই সাইটকে অনুকরণ করে আরো অনেক ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে www.minuteworkers.com, www.rapidworkers.com, www.minijobz.com ইত্যাদি। তবে সেই সাইটগুলো থেকে মাইক্রোওয়ার্কারসের মত আসলেই টাকা পাওয়া যায় কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
লেখক - মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "জুন ২০১০ ইং" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
ডাটা এন্ট্রি কাজ যারা করেন তারা ভালভাবেই জানেন যে একটি ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া কতটা কঠিন। কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার জানলেই এ ধরনের কাজ করা যায়। এজন্য প্রায় প্রতিটি মার্কেটপ্লেসে এক একটি ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্ট করতে শত শত আবেদন পড়ে। এদের মধ্য থেকে সুনির্দিষ্ট একজনকে বেছে নিতে ক্লায়েন্টদেরকে স্বীদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়। প্রথম কাজ পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কিছুদিন বিড করার পর কাজ না পেয়ে শেষে ফ্রিল্যান্সিং করার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেন। আজকে যে ওয়েবসাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব তাতে কাজ করার জন্য কোন বিড বা আবেদন করতে হয় না। অর্থাৎ ইচ্ছে করলে এই মূহুর্ত থেকে কাজ শুরু করে দেয়া যায়। আর কাজগুলোও অত্যন্ত সহজ। সাইটটি হচ্ছে মাইক্রোওয়ার্কারস (www.microworkers.com)।
প্রথম দর্শনেই সাইটটিকে সহজবোধ্য মনে হবে। মাইক্রোওয়ার্কারস সাইটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই সাইটের কাজগুলো অত্যন্ত ছোট ছোট। এক একটি কাজ করতে ৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। প্রতিটি কাজের মূল্য ০.১০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৭৫ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাইটে প্রতিদিনই নতুন নতুন কাজ আসে। এখানে একটি কাজ কেবলমাত্র একবারই করা যায়। মোট আয় ৯ ডলার হলেই চেক, মানিবুকার্স, পেপাল এবং এলার্টপে সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তোলন যায়।
মাইক্রোওয়ার্কারস সাইটে একজন ফ্রিল্যান্সারকে Worker এবং এবং একজন ক্লায়েন্টকে Employer হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাইটে এই দুই ধরনের ব্যবহারকারী কিভাবে কাজ করে তা নিচের কার্টুনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে-
Worker হিসেবে কাজ শুরু করার পূর্বে প্রথমে সাইটে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর মেনু থেকে Available Jobs লিংকে ক্লিক করে সকল কাজগুলো দেখা যাবে। প্রতিটি কাজের শিরোনামের সাথে কয়েকটি তথ্য পাওয়া যায় - কাজের মূল্য (Payment), শতকরা কতজনের কাজ ক্লায়েন্ট গ্রহণ করেছে (Success Rate), কাজটি করতে আনুমানিক কত মিনিট লাগতে পারে (Time), কতজন এ পর্যন্ত কাজটি করছে (Done) ইত্যাদি। কোন একটি কাজের শিরোনামের উপর ক্লিক করে সেই কাজের বিস্তারিত আরো তথ্য জানা যাবে। এর মধ্যে "What is expected from workers?" অংশ থেকে কাজের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যাবে। কাজটি যে আপনি যথাযথভাবে শেষ করেছেন তা প্রমাণ দিতে কি কি তথ্য প্রদান করতে হবে তা "Required proof that task was finished?" অংশের মাধ্যমে জানা যাবে। সবশেষে "I accept this job " লিংকে ক্লিক করে একটি টেক্সটবক্সে আপনার কাজের প্রমাণগুলো দিতে হবে। কোন কাজ করতে না পারলে "Not interested in this job" লিংকে ক্লিক করে বের হয়ে যাওয়াই ভাল, সেক্ষেত্রে এই কাজটি আপনার "Available Jobs" পাতায় আর কখনও দেখাবে না।
কাজের প্রকারভেদ:
এবার দেখা যাক সাইটে কি কি ধরনের কাজ পাওয়া যায় এবং সেগুলোর মূল্য সাধারণত কত হয় -- Click and Search ($0.10 - $0.15): এ ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট একটি সাইটের লিংক দিবে, যাতে ভিজিট করে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ দিয়ে সার্চ করতে হবে। সব শেষে ক্লায়েন্টের বর্ণনা অনুযায়ী এক বা একাধিক বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হবে।
- Bookmark a page ($0.10 - $0.20): ক্লায়েন্টের কোন একটি সাইটকে অন্য একটি সাইটে বুকমার্ক করতে হবে। এ ধরনের বুকমার্ক সাইটের মধ্যে রয়েছে digg.com, delicious.com বা mixx.com, যা ক্লায়েন্ট কাজের বিবরণীতে উল্লেখ করে দিবে। বুকমার্ক করার পূর্বে ওই সাইটে আপনার একটি একাউন্ট থাকতে হবে।
- Signup ($0.10 - $0.20): এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় আপনার ইমেইল ঠিকানা দিতে হবে। এ ধরনের কাজ করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল ঠিকানা দেয়া ঠিক হবে না। এজন্য পৃথক একটি ইমেইল একাউন্ট খুলে সেটি দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা উচিৎ। অন্যথায় স্পাম ইমেইলের কারণে আপনার দরকারী ইমেইল খোঁজে পাবেন না।
- Comment on other blog ($0.10 - $0.15): এই কাজে ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে এক বা একাধিক মন্তব্য দিতে হবে। মন্তব্যগুলো সাধারণত দুই-এক লাইনের হবে এবং ওই ওযেবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে স্বামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
- Forums ($0.10 - $0.15): এ ধরনের কাজের জন্য কোন একটি ফোরামে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে এবং Signature হিসেবে ক্লায়েন্টের কোন ওয়েবসাইটের লিংক দিতে হবে। এরপর ওই ফোরামের এক বা একাধিক পাতায় স্বামঞ্জস্যপূর্ণ মন্তব্য পোস্ট করতে হবে।
- Facebook ($0.15 - $0.20): এ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে ক্লায়েন্টকে ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা বা ক্লায়েন্টের Fan হওয়া অথবা কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার Wall এ পোস্ট করা।
- Twitter ($0.15 - $0.20): এক্ষেত্রে twitter.com এ একটি একাউন্ট থাকতে হবে এবং ক্লায়েন্টের একাউন্টকে Follow করতে হবে অথবা নিদিষ্ট কোন বিষয়ে পোস্ট করতে হবে।
- Write an article ($0.50 - $1.75): মাইক্রোওয়ার্কারসে প্রাপ্ত কাজগুলোর মধ্যে এই ধরনের কাজ অর্থাৎ কোন বিষয়ে ইংরেজীতে আর্টিকেল লিখে সবচেয়ে বেশি আয় করা যায়। লেখাগুলো ৫০ শব্দ থেকে শুরু করে ৫০০ শব্দের মধ্যে হয়ে থাকে। এ ধরনের কাজে এক দিকে যেমন ভাষাগত জ্ঞান বৃদ্ধি পায় তেমনি নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। তবে যাদের ইংরেজীতে লেখায় দক্ষতা আছে তারাই কেবল এ ধরনের কাজ করতে পারে। লেখায় তথ্য সংযোগের জন্য ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে অন্যান্য ওয়েবসাইটের সহায়তা নেয়া যাবে, তবে আপনার লেখাটা অবশ্যই মৌলিক হতে হবে। লেখা মৌলিক হল কিনা তা www.copyscape.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাচাই করা যাবে।
- Blog/Website Owners ($0.25 - $0.80): অনেক সময় শুধু লিখলেই হবে না, লেখাটা আপনার জনপ্রিয় কোন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এজন্য এধরনের কাজের নামের সাথে PR2+ PR3+, PR4+ ইত্যাদি লেখা দেখতে পাবেন। PR শব্দের মানে হচ্ছে Page Rank, আর PR2+ শব্দের মানে হচ্ছে যেসকল ওয়েবসাইটের পেইজ রেংক ২ বা তার অধিক। এটি গুগলের একটি মানদন্ড যা কোন ওয়েবসাইট কতটুকু জনপ্রিয় তা নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা হয়। একটি ওয়েবসাইটের পেইজ রেংক কত তা www.prchecker.info ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যায়। এ ধরনের কাজ শুরু করার পূর্বে www.blogger.com ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে আপনার নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন। প্রথম অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই পেইজ রেংক শুণ্য থাকবে। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটটিতে বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজিতে আর্টিকেল লিখেন তাহলে কয়েক মাস পর পেইজ রেংক বাড়তে থাকবে। লেখার পাশাপাশি ভাল রেংকের কয়েকটি ওয়েবসাইটের সাথে লিংক বিনিময় করতে পারলে পেইজ রেংক আরো তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকবে।
- Download and/or Install ($0.25 - 0.35): এই কাজে কোন সফটওয়্যার শুধুমাত্র ডাউনলোড এবং কোন কোন সময় ইন্সটলও করতে হয়।
- Post an Ad on Craigslist ($0.25 - $0.75): www.craigslist.org হচ্ছে শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের প্রদত্ত কোন পণ্যের বিজ্ঞাপণ craigslist.org সাইটে প্রকাশ করতে হয়। এজন্য পূর্বেই সাইটটিতে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
এই সাইটে কাজ করার সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে ঝামেলাপূর্ণভাবে কাজ করতে পারবেন -- কোন অবস্থাতেই একাধিক একাউন্ট তৈরি করার উচিৎ নয়। একজন ব্যবহারকারী একাধিক একাউন্ট তৈরি করলে তার সবগুলো একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়।
- একটি নির্দিষ্ট কাজ একবারের বেশি কখনও করতে পারবেন না। তবে একই ধরনের অন্য কাজ করতে কোন বাধা নেই।
- কাজ না বুঝে কখনও কাজ জমা দিবেন না। প্রতিটি কাজের শেষে ক্লায়েন্ট আপনার কাজ পছন্দ হলে "Satisfied" দিবে, অথবা অপছন্দ হলে "Not Satisfied" রেটিং দিবে। এই দুই ধরনের রেটিং এর তুলনাকে "Success Rate" বলা হয়। গত ৩০ দিনে আপনি যদি ৫ টি কাজ সম্পন্ন করেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার "Success Rate" যদি ৭৫% এর নিচে হয়, তাহলে পরবর্তী ১ থেকে ৩০ দিন আপনি আর কোন কাজ করতে পারবেন না। তাই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কোন কাজ করা উচিৎ এবং কাজ শেষে ক্লায়েন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রমাণ উপস্থাপন করা আবশ্যক।
- কখনও যদি "Success Rate" ৭৫% এর কম হয়ে যায়, তাহলে হতাশ না হয়ে দুই-একদিন অপেক্ষা করে আবার কাজ করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখুন।
- নতুন ব্যবহারকারীরা প্রথম প্রথম একদিনে সর্বোচ্চ ৫ টি কাজ করতে পারবেন। এরপর ক্লায়েন্টের রেটিং এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ১০ টি কাজ করার পর এই সীমাটি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।
- কখনও যদি মনে করেন আপনি যথাযথভাবে কাজ করেছেন কিন্তু ক্লায়েন্ট আপনাকে "Not Satisfied" রেটিং দিয়েছে তাহলে "Submit a Complain" লিংকের মাধ্যমে আপনার অভিযোগ সাইটের কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন।
- কাজের প্রমাণ হিসেবে কখনও ভূয়া তথ্য প্রদান করবেন না, এ ধরনের কাজ তিনবার করলে একাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- যে সকল কাজে IP এড্রেস দিতে হয় সেসব কাজ না করাই ভাল। কারণ আমাদের দেশের ইন্টারনেট প্রোভাইডাররা গ্রাহকদেরকে শেয়ারকৃত IP এড্রেস দিয়ে থাকে। ফলে আপনার মত একই ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ আছে এরকম কেউ সেই কাজটি পূর্বে করে থাকলে ক্লায়েন্ট আপনার কাজ গ্রহণ করবে না। আমাদের দেশে বিশষত গ্রামীণফোন বা সিটিসেলের ইন্টারনেট ব্যবহাকারী বেশি হওয়ায় এই সমস্যাটা তাদের ক্ষেত্রে বেশি হবে।
অর্থ উত্তোলন:
- শুধুমাত্র "Satisfied" রেটিং পেলেই সেই কাজের টাকা আপনার একাউন্টের ব্যালেন্সের সাথে যুক্ত হবে।
- চারটি পেমেন্ট পদ্ধতির যে কোনটিতে টাকা তুলতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হয়। চেকের ক্ষেত্রে ৪.৫০ ডলার, পেপালের ক্ষেত্রে ৬%, মানিবুকার্স এবং এলার্টপে পদ্ধতিতে ৬.৫% ফি দিতে হয়।
- একাউন্টের ব্যালেন্স ৯ ডলারের উপর হলেই কেবলমাত্র টাকা তুলতে পারবেন। সাথে ফি দেবার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ একাউন্টে থাকতে হবে।
- প্রথম Withdraw করার আবেদনের সময় আপনার বাসার ঠিকানায় চিঠির মাধ্যমে একটি PIN নাম্বার পাঠানো হবে। এই নাম্বারটি পরবর্তীতে সাইটে প্রবেশ করাতে হবে। কেউ একাধিক একাউন্ট তৈরি করেছে কিনা তা যাচাই করতে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়। PIN নাম্বারের চিঠিটি আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতে পারে।
- ঠিকানা যাচাই করার পর পরবর্তী Withdraw আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে মূল্য পরিশোধ করা হবে।
আমাদের দেশের অনেক ফ্রিল্যান্সাররা ইতিমধ্যে এই সাইটে কাজ করছেন এবং তারা সাইট থেকে নিয়মিত টাকা পাচ্ছেন। তবে একটা বাস্তব সত্য হচ্ছে এই সাইট থেকে খুব বেশি পরিমাণে আয় করা যায় না। যারা পড়ালেখা বা অন্য কাজের পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে বাড়তি আয় করতে চান তাদের জন্য এই সাইট অবশ্যই আয়ের একটি ভাল উপায় হতে পারে। এই সাইটের জনপ্রিয়তা এত বেশি যে, ইদানিংকালে এই সাইটকে অনুকরণ করে আরো অনেক ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে www.minuteworkers.com, www.rapidworkers.com, www.minijobz.com ইত্যাদি। তবে সেই সাইটগুলো থেকে মাইক্রোওয়ার্কারসের মত আসলেই টাকা পাওয়া যায় কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
লেখক - মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "জুন ২০১০ ইং" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
May 16
বর্তমানে ওডেস্ক (www.oDesk.com) মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সররদের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। ওডেস্কে যে কয়জন ফ্রিল্যান্সার সফলতার সাথে কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে "আলফা ডিজিটাল" নামক একটি টিম। বর্তমানে এই টিমের সদস্য সংখ্যা ৫০ এর কাছাকাছি। কয়েকমাস আগেও এই গ্রুপটি ওডেস্কের শীর্ষ দশের মধ্যে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছিল। গত বছরের এপ্রিলে গঠিত হয়ে মাত্র এক বছরে তারা এ পর্যন্ত ৩১৮ টি প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছে এবং মোট ১৩ হাজার ঘন্টার উপর কাজ করেছে। এই মূহুর্তে তারা একসাথে ৭৫ টি প্রজেক্টে কাজ করছে। এই টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হচ্ছেন মামুনুর রশিদ নামক একজন ফ্রিল্যান্সার। ওডেস্কে এই সফলতা নিয়ে কথা বলেছিলাম তার সাথে। জানিয়েছেন এই সফলতার পেছনের সকল প্রচেষ্টার কথা।
মামুনুর রশিদ পড়ালেখা করেছেন ঢাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। জন্মসূত্রে বরিশালের ছেলে। বর্তমানে বাবার চাকুরীর সুবাদে এখন খুলনায় বসবাস করছেন। সেখানে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে এত বড় একটা টিম পরিচালনা করছেন। মামুনুর রশিদের কম্পিউটারের সাথে পরিচয় ২০০১ সালে, S.S.C পরীক্ষার পর থেকে। নিজের আগ্রহ এবং বাবার উৎসাহে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ালেখা করেছেন। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তীতে খুলনায় একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় কিছুদিন কাজও করেছেন।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ফিচার থেকে। এরপর www.odesk.com, www.freelancer.com এবং www.rentacoder.com এ একাউন্ট তৈরি করে নেন। কিন্তু প্রথম অবস্থায় অনেক বিড (Bid) করার পরও কাজ না পাবার কারণে ফ্রিল্যান্সিং আর করা হয় নি। বছর দেড়েক পরে "কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে একটা লেখা পড়ে এ বিষয়ে পুনরায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এবারে নিজের একটি ভাল প্রোফাইল তৈরি করেন এবং এলোমেলোভাবে বিড না করে প্রতিটি প্রজেক্ট ভালভাবে বুঝে বিড করা শুরু করেন। ৪ দিন পর এক সাথে দুটি প্রজেক্ট পেয়ে যান। প্রথম প্রথম ডাটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে Project Manager, Wordpress, Magento Shopping Cart, X-Cart Shopping Cart, Zen Cart Shopping Cart এর কাজ গুলো করে থাকেন। কাজ করার সময় সততা, কাজ এর গুনগত মান এবং ডেড লাইন এর দিকে যথাসম্ভব সর্তক থাকেন।
জানতে চেয়েছিলাম ওডেস্কে টিম কেন তৈরি করলেন। জানালেন ওডেস্কে কাজ শুরু করার মাত্র ২ মাস পর প্রচুর পরিমান কাজ পেতে শুরু করেন, যা একার পক্ষে সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে গেল। প্রথম দিকে ক্লায়েন্টদের ফিরিয়ে দিতেন, কিন্তু পরে টিম করার কথা ভাবলেন।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল টিমের সদস্যদের সবাইকে অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যাট করার জন্য ইয়াহু এবং স্কাইপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। আর সদস্যদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য সিটিসেল ব্যবহার করে থাকেন। প্রজেক্টের নির্দেশাবলী বোঝানোর জন্য টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। সকল সদস্য ও সকল প্রজেক্ট পরিচালনা করার জন্য টিমে একজন ম্যানেজার এবং চারজন সুপারভাইজার রয়েছে। অনলাইন থেকে নতুন অদক্ষ সদস্য সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। অবশ্য এর জন্য তাদের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা নেওয়া হয় না। বর্তমানে "আলফা ডিজিটাল" টিম ২৫-৩০ জন ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত কাজ করছে। কাজের মধ্যে রয়েছে Data Entry, Personal Assistant, Web Research, Email Response Handling, Advertising, Email Marketing, Social Media Marketing, Search Engine Optimization, Search Engine Marketing, Social Media Marketing, Market Research And Surveys, Web Design এবং Wordpress।
বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ফোনে কথা বলেছিলাম মামুনুর রশিদের সাথে। এই কথোপোকথনগুলো নিচে উপস্থাপন করা হল -
জাকারিয়া: প্রথমে আমাকে ওডেস্কের টিম তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটু বলুন। যে কোন ব্যবহারকারী কি আপনাদের মত এরকম একটি টিম গঠন করে কাজ করতে পারবে?
মামুন: ওডেস্কে দুইভাবে কাজ করা যায়। একটি হচ্ছে স্বতন্ত্রভাবে এবং একটি হচ্ছে কোম্পানী তৈরির মাধ্যমে। ওডেস্কে স্বতন্ত্রভাবে একাউন্ট তৈরি করার পর কোম্পানী তৈরির জন্য একটা অপশন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানির একটি নাম এবং আইডি দিতে হয় যা কখনও পরিবর্তন করা যায় না। কোম্পানির অধীনে আবার বেশ কয়েকটি টিম তৈরি করা যায়। যেমন আমাদের "আলফা ডিজিটাল" কোম্পানীর অধীনে ৫ টি টিম রয়েছে - আলফা ডাটা, আলফা ওয়েব, আলফা ডিজাইন, আলফা এসইও ইত্যাদি।
জাকারিয়া: টিমের সদস্যের ম্যানেজ করার জন্য কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়?
মামুন: ওডেস্ককে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা বলতে পারেন, অনেকটা অফিস ম্যানেজমেন্ট করার মত। আমাদের কাজ করার জন্য "ওডেস্ক টিম সফটওয়্যার" নামক নির্দিষ্ট একটা সফটওয়্যার চালু করে কাজ করতে হয়। সফটওয়্যারের আকার অত্যন্ত ছোট, ৪২২ কিলোবাইটের মত।
জাকারিয়া: ওডেস্কে টিমের জন্য বিড কিভাবে করতে হয়? টিমের পক্ষ থেকে এটা কি আপনি করে থাকেন নাকি সদস্যরা নিজেরাই বিড করে থাকে?
মামুন: এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, যখন একজন নতুন সদস্য আমার টিমে যোগ দেয়, তখন তাদের আইডির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আমার কাছে চলে আসে। তাদের কাছে নিয়ন্ত্রণ থাকে শুধু বিড করা আর কাজ করা। সাথে প্রোফাইলের নাম বা এধরনের বিষয় পরিবর্তন করতে পারে, এছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। এমনকি কাজের মূল্য পর্যন্ত আমার উপর নির্ভর করে। তাদের ব্যালেন্সও আমার কাছে আসে। কাজ করার জন্য জন্য একজন সদস্য নিজেও বিড করতে পারে এবং আমিও তাদের জন্য বিড করতে পারি।
জাকারিয়া: যখন একটা নতুন কাজ পেলেন তখন সেই কাজটা কি তারা নিজেরাই শুরু করে দিতে পারে?
মামুন: একটা কাজ যখন কোন সদস্য পায় তখন সে নিজেই বায়ার (Buyer) কে ইমেইল করে কাজের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করে। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে যখন উত্তর আসে তখন সে নিজে বুঝতে চেষ্টা করে। বুঝতে পারলে কাজ শুরু করে দেয় আর না পারলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমি তাকে কাজটি বুঝিয়ে দেই।
জাকারিয়া: টিমের ব্যবস্থাপনা কি শুধু আপনি একাই করছেন?
মামুন: টিমের ব্যবস্থাপনা করার জন্য আমাদের একজন ম্যানেজার এবং চারজন সুপারভাইজার রয়েছেন। টিমের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি ইচ্ছে করলে কাউকে ম্যানেজার করে দিতে পারে। আমাদের টিমের ম্যানেজারের হাতে একাউন্ট অংশটা বাদে একজন ফ্রিল্যান্সারকে নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে সকল ক্ষমতাই আছে।
জাকারিয়া: এবার কি কি কাজ করছেন সে সম্পর্কে যদি একটু ধারণা দিতেন, যেমন কোন ধরনের ডাটা এন্ট্রি কাজ করে থাকেন ইত্যাদি?
মামুন: আমরা এই মূহুর্তে একটি ইকমার্স সাইটের কাজ করছি। এদের সাথে প্রায় ছমাসের মত কাজ করছি। আমাদের ১২ জন মেম্বার এই প্রজেক্টে কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন প্রডাক্টের নাম, ছবি, মূল্য, বর্ণনা ইত্যাদি সাইটের Admin Panel এ যোগ করে দেই। ডাটা এন্ট্রি কাজের রেট কখনও ঘন্টায় ১ থেকে ১.৫ ডলারের বেশী পাওয়া যায় না।
আরেক ধরনের কাজ করি সেটা হচ্ছে ওয়েব রিসার্চ। এ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৪ ডলার প্রতি ঘন্টায় পাওয়া যায়। এ ধরনের কাজের উদাহরণ হচ্ছে, মনে করুন আপনি হোস্টিং ব্যবসা করবেন। এক্ষেত্রে আপনি হয়ত অন্যান্য হোস্টিং কোম্পানীর বিভিন্ন প্লানের মূল্য জানতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমরা ইন্টারনেটে এই রিসার্চটা করে প্রতিদ্ধন্দী কোম্পানীর মূল্য বের করে দেই।
আমরা ইমেইল মার্কেটিং এর কাজও করে থাকি। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ সফওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হয়। এটা সবার কাছে থাকে না বলে সবাই এই কাজগুলো করতে পারে না। ইমেইল মার্কেটিং এর পাশাপাশি SEO Optimization, SEO Marketing, Personal Assistance এর কাজও করে থাকি। Personal Assistance এর নির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্র নাই। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট যা বলে তাই করতে হয়।
জাকারিয়া: এবার আসি পেমেন্টের ব্যাপারে। টিমের সদস্যদেরকে কতটুকু অর্থ দেয়া হয়? আপনারা কি কোন কমিশন রাখেন?
মামুন: হ্যাঁ আমরা এক্ষেত্রে ১৫% কমিশন রাখি। মূলত একজন সদস্য যখন আমাদের এখানে যোগ দেয় তখন তাকে আমরা ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করে নেই। ট্রেনিংটা বিনামূল্যে করিয়ে থাকি। এরপর সে যখন ওডেস্কে একটা কাজ করে তখন সেখান থেকে ১৫% কমিশন রেখে বাকিটা তাকে দিয়ে দেয়া হয়।
জাকারিয়া: সদস্যরা প্রতিমাসে গড়ে কত টাকা আয় করে?
মামুন: এটা কাজের উপর নির্ভর করে। কেউ কেউ হয়ত মাসে মাত্র ৫৫ টাকা আয় করে আর কারো কারো ক্ষেত্রে মাসে বাইশ/তেইশ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। যে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে কাজ করে তার আয় ৮-১০ হাজারের মত হয়ে যায়। আর যার কাজের রেট প্রতি ঘন্টায় ২ ডলার, তার জন্য অনায়াসে ২০ হাজার টাকা চলে আসে। আমাদের টিমের প্রতি সপ্তাহে আয় থাকে প্রায় ৫০০ ডলার এবং মাসে আমরা কমপক্ষে ২,০০০ ডলার আয় করি।
জাকারিয়া: পেমেন্টের হিসেব নিকাশ কি সব আপনার মাধ্যমেই হয়ে থাকে?
মামুন: একজন সদস্য কত রেটে কাজ করছে বা কত আয় করছে তা দেখতে পারে না। আসলে তাদের দিক থেকে এটা অনেকটা একটা কোম্পানীতে কাজ করার মত হয়ে থাকে। কোম্পানীতে কাজ করবে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পাবে। কিন্তু আমি যেটা করি, টিমে স্বচ্ছতা থাকার জন্য প্রতিমাসে বিলের যে PDF ফাইল পাই, তা মেইল করে সবাইকে পাঠিয়ে দেই। তখন সবাই দেখতে পারে কে কত ঘন্টা কাজ করেছে, কত রেটে কাজ করেছে, মোট কত আয় করেছে ইত্যাদি। তবে ওডেস্ক এটা করতে কখনও অনুমতি দেয় না।
জাকারিয়া: আপনাদের গ্রুপে যোগ দিতে হলে নূন্যতম কি কি জানতে হবে?
মামুন: কম্পিউটারের বেসিক কাজগুলো এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারলেই যথেষ্ঠ। আসলে আমরা যে সকল সদস্য নেই তারা Notepad কি তাই অনেক সময় জানে না। একজনকে আমি বলেছিলাম আপনি Notepad চালু করেন। সে বলল, ভাই আমার কম্পিউটারে Notepad ইন্সটল করা নাই। সে পরবর্তীতে আমাদের সুপারভাইজার পদে নিয়োগ পেয়েছে। তাকে সেভাবে দক্ষ করে নেয়া হয়েছে।
আমার টিমে যোগ দেয়ার কয়েকটা শর্ত আছে -
১) ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে। কারণ মাসের ৭-১০ তারিখ ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে সদস্যদের টাকা দেয়া হয়।
২) সিটিসেল মোবাইল সংযোগ থাকতে হবে, কম খরচে কথা বলার জন্য। আমাদের দেশে ইন্টারনেটের স্পীড যদি আরেকটু বেশি থাকত তাহলে আমরা অনায়াসেই ভয়েস কন্ফারেন্স করতে পারতাম।
৩) যে কোন আদেশ বিনা বাক্যে পালন করতে হবে।
জাকারিয়া: প্রশিক্ষণটা কিভাবে দিয়ে থাকেন?
মামুন: আমাদের বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে। আমাদের কয়েকটি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে যাতে কিভাবে বিড করতে হবে, কিভাবে প্রোফাইল সাজাতে হবে ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে। বিড করার পর বায়ারের সাথে যোগাযোগের উপর কয়েকটা টিউটোরিয়াল রয়েছে। টিউটোরিয়ালগুলো আমাদের নিজস্ব সার্ভারে আপলোড করা আছে, আমরা তাদেরকে লিংকগুলো দিয়ে দেই। টিউটোরিয়ালগুলো বাংলাতে আমি নিজেই তৈরি করেছি। নতুন কাজের ক্ষেত্রে টিউটোরিয়াল তৈরি করা হয় না, সেক্ষেত্রে ফোনে তাদেরকে বুঝিয়ে দেই। সাথে টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার দিয়ে দেখিয়ে দেই কোথায় কোথায় ক্লিক করে কাজ করতে হবে।
জাকারিয়া: তাদেরকে ইংরেজিটা কতটুকু জানতে হয় বা না জানলে হয় কি না?
মামুন: আসলে তাদেরকে ইংরেজি না জানলেও চলে। টিমের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে নির্দেশনা বোঝার কোন ঝামেলা হয় না। ক্লায়েন্ট ইমেইল পাবার পর আমাকে ফোন করলে আমি সাথে সাথে তা বুঝিয়ে দেই। আর বিড করার জন্য তাদেরকে একটা কভার লেটার তৈরি করে দেই।
জাকারিয়া: আপনাদের টিমে মেয়েদের কাজের পারফর্মেন্স কি রকম?
মামুন: বর্তমানে ৪ জন মেয়ে আমাদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। পুরুষদের চেয়ে মেয়েরা খুব সৎভাবে এখানে কাজ করেন।
জাকারিয়া: টিমের অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কে একটু বলুন।
মামুন: টিমে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই শিক্ষার্থী। ফলে পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমরাদেরকে কম প্রজেক্টে কাজ করতে হয়। তখন প্রায় মাসখানেকের মত বিড করা বন্ধ করে দেই। টিমে ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন পাঁচজন। আমার যে ম্যানেজার উনার বাড়ি হল নারায়নগঞ্জে। গ্রাফিক্স ডিজাইনার মিরপুর থেকে কাজ করেন। বেশিরভাগ সদস্যই ঢাকাতে অবস্থিত, আমিই শুধুমাত্র খুলনাতে।
জাকারিয়া: আপনাদের এত বড় টিমের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য কোন ফোরাম কি আছে?
মামুন: এজন্য গুগল গ্রুপে "আলফা ডিজিটাল প্রজেক্ট" নামে আমাদের একটা গ্রুপ আছে। এটা একটা প্রাইভেট গ্রুপ যাতে যে কেউ যোগ দিতে পারে না। প্রজেক্টগুলো আমরা এই গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করে থাকি।
জাকারিয়া: টিম পরিচালনার পাশাপাশি আপনি কি অন্য কোন কাজ করছেন?
মামুন: না না, এই সকল কাজ করেই আর সময় পাই না।
জাকারিয়া: টিমের মাধ্যমে কাজ করার সময় কোন ধরনের সমস্যা হয় কি?
মামুন: আমি প্রায় সময় একটা সমস্যায় পড়ি, তা হচ্ছে কেউ যখন কোন ভুল করে তখন তাকে অনলাইনে শাস্তি দেয়ার কোন উপায় থাকে না। সর্বোচ্চ ফোনে দুইটা বকা দেয়া যায়। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, অদক্ষ লোক নিয়ে কাজ করার সময় এরা কিছুদিন পর নিজে আলাদাভাবে কাজ করা শুরু করে দেয়। সেক্ষেত্রে টিমটা আর বড় হয় না। সবার মধ্যে একতা থাকলে শীর্ষ অবস্থানটা অনায়াসে ধরে রাখা যেত। কিছুদিন আগেও আমরা ওডেস্কের শীর্ষ দশে ছিলাম, এখন আমাদের স্কোর অনেক কমে গেছে। টিমে সবাইতো আর সৎভাবে কাজ করে না। যেমন একটা প্রজেক্টে বায়ার বলেছিল আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে, তার সার্ভারে একটা কাজ চলছে। তখন টিমের একজন ওডেস্কের টিম সফটওয়্যারটি প্রায় ৫ ঘন্টা চালিয়ে রেখে বায়ারকে বলেছিল সে কাজ করেছে এবং সে অনুযায়ী বিল করে দেয়। আসলে তখন সে কোন কাজই করেনি। ওই কাজে ১২ জন মেম্বার কাজ করত, বায়ার তখন সবাইকে ৫ এর মধ্য ১ ফিডব্যাক দিয়ে দেয়। এখন চিন্তা করেন ১২ জনের ফিডব্যাক যদি ১ করে পড়ে তাহলে কোম্পানীর প্রোফাইল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আমাদের গড় ফিডব্যাক ২ এর কাছাকাছি চলে আসে। এরপর দীর্ঘ ৩ মাস কাজ করতে করতে এখন ৩.৭৮ এ উঠে এসেছে।
ওডেস্কে দুই ধরনের কাজ পাওয়া যায় - Fixed এবং Hourly Job। ওডেস্কে কাজের সমস্যার মধ্যে আরেকটা হচ্ছে এখানে Fixed Job প্রজেক্টে টাকা পাবার গ্যারান্টি পাওয়া যায় না। অনেক বায়ার আছে যারা মধুর মধুর কথা বলে Fixed Job প্রজেক্টগুলো করায়। কাজ শেষে আর টাকা দেয় না। গত মাসে এভাবে আমি ৭৫০ ডলার লোকসান করেছি। ওডেস্কে Fixed Job কাজ না করে শুধুমাত্র Hourly Job গুলো করা উচিৎ। এই সাইটে অন্যান্য সাইটের মত Escrow তে টাকা জমা রাখার সুবিধা নেই। এটা নতুনদের খেয়াল রাখা উচিৎ।
জাকারিয়া: টিমে কাজ করার ক্ষেত্রে মজা কিরকম?
মামুন: মজা তো অনেক। আসলে এই লাইনে কাজ করতে এসে অনেক অনেক সম্মান পেয়েছি, যেটা আমি আমার চাকুরী জীবনে পাইনি। এইটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া, টাকা পয়সা পাই বা না পাই। আমাদের সম্পন্ন করা সকল প্রজেক্টের মধ্যে সেরা এবং আনন্দদায়ক প্রজেক্ট হলো- "টেলিকমিনেকেশন সার্ভে"। এই প্রজেক্ট এ আমরা নরওয়ের এক বায়ারের হয়ে বাংলাদেশের সকল মোবাইল কোম্পানীর উপর সার্ভে করেছিলাম। গ্রামীন ফোন, বাংলালিঙ্ক, ওয়ারিদ, সিটিসেল, একটেল এবং টেলিটক কোম্পানীর মধ্যে কার কল রেট কেমন, কে কি কি সুবিধা দিচ্ছে, কে কে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়, কোন কোম্পানীর শতকরা গ্রাহক কত, কার কভারেজ কেমন - এই সকল বিষয় এর উপর আমরা রিপোর্ট করি। এই প্রজেক্টে আমরা ৪ মাসের অধিক সময় কাজ করি। সেই বায়ার বাংলাদেশে অনেক বড় একটা ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিল। এখন তারা ফিলিপাইন এ কাজ করছে।
জাকারিয়া: ওডেস্কে টিম নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মামুন: এই টিমকে আমি অনেক বড় করব। ওডেস্কে একটা টিম আছে যারা প্রায় ১১ লক্ষ ঘন্টা কাজ করে ফেলেছে। সেখানে আমরা মাত্র ১৩ হাজার ঘন্টা কাজ করেছি। ওরা অবশ্য ২০০১ সাল থেকে ওডেস্কে কাজ করছে। আমরা এক বছরে এই অবস্থানে এসেছি। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে আমরাও এরকম একটা পর্যায়ে যাব, ওডেস্কের মধ্যে শক্ত একটা অবস্থান।
"আলফা ডিজিটাল" টিমের ওডেস্ক প্রোফাইলের ঠিকানা হচ্ছে www.alphadigital.tk।
দৃষ্টি আকর্ষণ - "আলফা ডিজিটাল" টিমে এই মূহুর্তে আর কোন নতুন মেম্বার নেয়া হচ্ছে না। টিম মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের গ্রুপে যোগদান করতে পারেন।
http://groups.google.com/group/odesk-bangladesh
লেখক - মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "মে ২০১০" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
মামুনুর রশিদ পড়ালেখা করেছেন ঢাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। জন্মসূত্রে বরিশালের ছেলে। বর্তমানে বাবার চাকুরীর সুবাদে এখন খুলনায় বসবাস করছেন। সেখানে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে এত বড় একটা টিম পরিচালনা করছেন। মামুনুর রশিদের কম্পিউটারের সাথে পরিচয় ২০০১ সালে, S.S.C পরীক্ষার পর থেকে। নিজের আগ্রহ এবং বাবার উৎসাহে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ালেখা করেছেন। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তীতে খুলনায় একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় কিছুদিন কাজও করেছেন।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ফিচার থেকে। এরপর www.odesk.com, www.freelancer.com এবং www.rentacoder.com এ একাউন্ট তৈরি করে নেন। কিন্তু প্রথম অবস্থায় অনেক বিড (Bid) করার পরও কাজ না পাবার কারণে ফ্রিল্যান্সিং আর করা হয় নি। বছর দেড়েক পরে "কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে একটা লেখা পড়ে এ বিষয়ে পুনরায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এবারে নিজের একটি ভাল প্রোফাইল তৈরি করেন এবং এলোমেলোভাবে বিড না করে প্রতিটি প্রজেক্ট ভালভাবে বুঝে বিড করা শুরু করেন। ৪ দিন পর এক সাথে দুটি প্রজেক্ট পেয়ে যান। প্রথম প্রথম ডাটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে Project Manager, Wordpress, Magento Shopping Cart, X-Cart Shopping Cart, Zen Cart Shopping Cart এর কাজ গুলো করে থাকেন। কাজ করার সময় সততা, কাজ এর গুনগত মান এবং ডেড লাইন এর দিকে যথাসম্ভব সর্তক থাকেন।
জানতে চেয়েছিলাম ওডেস্কে টিম কেন তৈরি করলেন। জানালেন ওডেস্কে কাজ শুরু করার মাত্র ২ মাস পর প্রচুর পরিমান কাজ পেতে শুরু করেন, যা একার পক্ষে সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে গেল। প্রথম দিকে ক্লায়েন্টদের ফিরিয়ে দিতেন, কিন্তু পরে টিম করার কথা ভাবলেন।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল টিমের সদস্যদের সবাইকে অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যাট করার জন্য ইয়াহু এবং স্কাইপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। আর সদস্যদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য সিটিসেল ব্যবহার করে থাকেন। প্রজেক্টের নির্দেশাবলী বোঝানোর জন্য টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। সকল সদস্য ও সকল প্রজেক্ট পরিচালনা করার জন্য টিমে একজন ম্যানেজার এবং চারজন সুপারভাইজার রয়েছে। অনলাইন থেকে নতুন অদক্ষ সদস্য সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। অবশ্য এর জন্য তাদের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা নেওয়া হয় না। বর্তমানে "আলফা ডিজিটাল" টিম ২৫-৩০ জন ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত কাজ করছে। কাজের মধ্যে রয়েছে Data Entry, Personal Assistant, Web Research, Email Response Handling, Advertising, Email Marketing, Social Media Marketing, Search Engine Optimization, Search Engine Marketing, Social Media Marketing, Market Research And Surveys, Web Design এবং Wordpress।
বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ফোনে কথা বলেছিলাম মামুনুর রশিদের সাথে। এই কথোপোকথনগুলো নিচে উপস্থাপন করা হল -
জাকারিয়া: প্রথমে আমাকে ওডেস্কের টিম তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটু বলুন। যে কোন ব্যবহারকারী কি আপনাদের মত এরকম একটি টিম গঠন করে কাজ করতে পারবে?
মামুন: ওডেস্কে দুইভাবে কাজ করা যায়। একটি হচ্ছে স্বতন্ত্রভাবে এবং একটি হচ্ছে কোম্পানী তৈরির মাধ্যমে। ওডেস্কে স্বতন্ত্রভাবে একাউন্ট তৈরি করার পর কোম্পানী তৈরির জন্য একটা অপশন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানির একটি নাম এবং আইডি দিতে হয় যা কখনও পরিবর্তন করা যায় না। কোম্পানির অধীনে আবার বেশ কয়েকটি টিম তৈরি করা যায়। যেমন আমাদের "আলফা ডিজিটাল" কোম্পানীর অধীনে ৫ টি টিম রয়েছে - আলফা ডাটা, আলফা ওয়েব, আলফা ডিজাইন, আলফা এসইও ইত্যাদি।
জাকারিয়া: টিমের সদস্যের ম্যানেজ করার জন্য কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়?
মামুন: ওডেস্ককে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা বলতে পারেন, অনেকটা অফিস ম্যানেজমেন্ট করার মত। আমাদের কাজ করার জন্য "ওডেস্ক টিম সফটওয়্যার" নামক নির্দিষ্ট একটা সফটওয়্যার চালু করে কাজ করতে হয়। সফটওয়্যারের আকার অত্যন্ত ছোট, ৪২২ কিলোবাইটের মত।
জাকারিয়া: ওডেস্কে টিমের জন্য বিড কিভাবে করতে হয়? টিমের পক্ষ থেকে এটা কি আপনি করে থাকেন নাকি সদস্যরা নিজেরাই বিড করে থাকে?
মামুন: এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, যখন একজন নতুন সদস্য আমার টিমে যোগ দেয়, তখন তাদের আইডির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আমার কাছে চলে আসে। তাদের কাছে নিয়ন্ত্রণ থাকে শুধু বিড করা আর কাজ করা। সাথে প্রোফাইলের নাম বা এধরনের বিষয় পরিবর্তন করতে পারে, এছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। এমনকি কাজের মূল্য পর্যন্ত আমার উপর নির্ভর করে। তাদের ব্যালেন্সও আমার কাছে আসে। কাজ করার জন্য জন্য একজন সদস্য নিজেও বিড করতে পারে এবং আমিও তাদের জন্য বিড করতে পারি।
জাকারিয়া: যখন একটা নতুন কাজ পেলেন তখন সেই কাজটা কি তারা নিজেরাই শুরু করে দিতে পারে?
মামুন: একটা কাজ যখন কোন সদস্য পায় তখন সে নিজেই বায়ার (Buyer) কে ইমেইল করে কাজের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করে। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে যখন উত্তর আসে তখন সে নিজে বুঝতে চেষ্টা করে। বুঝতে পারলে কাজ শুরু করে দেয় আর না পারলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমি তাকে কাজটি বুঝিয়ে দেই।
জাকারিয়া: টিমের ব্যবস্থাপনা কি শুধু আপনি একাই করছেন?
মামুন: টিমের ব্যবস্থাপনা করার জন্য আমাদের একজন ম্যানেজার এবং চারজন সুপারভাইজার রয়েছেন। টিমের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি ইচ্ছে করলে কাউকে ম্যানেজার করে দিতে পারে। আমাদের টিমের ম্যানেজারের হাতে একাউন্ট অংশটা বাদে একজন ফ্রিল্যান্সারকে নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে সকল ক্ষমতাই আছে।
জাকারিয়া: এবার কি কি কাজ করছেন সে সম্পর্কে যদি একটু ধারণা দিতেন, যেমন কোন ধরনের ডাটা এন্ট্রি কাজ করে থাকেন ইত্যাদি?
মামুন: আমরা এই মূহুর্তে একটি ইকমার্স সাইটের কাজ করছি। এদের সাথে প্রায় ছমাসের মত কাজ করছি। আমাদের ১২ জন মেম্বার এই প্রজেক্টে কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন প্রডাক্টের নাম, ছবি, মূল্য, বর্ণনা ইত্যাদি সাইটের Admin Panel এ যোগ করে দেই। ডাটা এন্ট্রি কাজের রেট কখনও ঘন্টায় ১ থেকে ১.৫ ডলারের বেশী পাওয়া যায় না।
আরেক ধরনের কাজ করি সেটা হচ্ছে ওয়েব রিসার্চ। এ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৪ ডলার প্রতি ঘন্টায় পাওয়া যায়। এ ধরনের কাজের উদাহরণ হচ্ছে, মনে করুন আপনি হোস্টিং ব্যবসা করবেন। এক্ষেত্রে আপনি হয়ত অন্যান্য হোস্টিং কোম্পানীর বিভিন্ন প্লানের মূল্য জানতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমরা ইন্টারনেটে এই রিসার্চটা করে প্রতিদ্ধন্দী কোম্পানীর মূল্য বের করে দেই।
আমরা ইমেইল মার্কেটিং এর কাজও করে থাকি। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ সফওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হয়। এটা সবার কাছে থাকে না বলে সবাই এই কাজগুলো করতে পারে না। ইমেইল মার্কেটিং এর পাশাপাশি SEO Optimization, SEO Marketing, Personal Assistance এর কাজও করে থাকি। Personal Assistance এর নির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্র নাই। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট যা বলে তাই করতে হয়।
জাকারিয়া: এবার আসি পেমেন্টের ব্যাপারে। টিমের সদস্যদেরকে কতটুকু অর্থ দেয়া হয়? আপনারা কি কোন কমিশন রাখেন?
মামুন: হ্যাঁ আমরা এক্ষেত্রে ১৫% কমিশন রাখি। মূলত একজন সদস্য যখন আমাদের এখানে যোগ দেয় তখন তাকে আমরা ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করে নেই। ট্রেনিংটা বিনামূল্যে করিয়ে থাকি। এরপর সে যখন ওডেস্কে একটা কাজ করে তখন সেখান থেকে ১৫% কমিশন রেখে বাকিটা তাকে দিয়ে দেয়া হয়।
জাকারিয়া: সদস্যরা প্রতিমাসে গড়ে কত টাকা আয় করে?
মামুন: এটা কাজের উপর নির্ভর করে। কেউ কেউ হয়ত মাসে মাত্র ৫৫ টাকা আয় করে আর কারো কারো ক্ষেত্রে মাসে বাইশ/তেইশ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। যে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে কাজ করে তার আয় ৮-১০ হাজারের মত হয়ে যায়। আর যার কাজের রেট প্রতি ঘন্টায় ২ ডলার, তার জন্য অনায়াসে ২০ হাজার টাকা চলে আসে। আমাদের টিমের প্রতি সপ্তাহে আয় থাকে প্রায় ৫০০ ডলার এবং মাসে আমরা কমপক্ষে ২,০০০ ডলার আয় করি।
জাকারিয়া: পেমেন্টের হিসেব নিকাশ কি সব আপনার মাধ্যমেই হয়ে থাকে?
মামুন: একজন সদস্য কত রেটে কাজ করছে বা কত আয় করছে তা দেখতে পারে না। আসলে তাদের দিক থেকে এটা অনেকটা একটা কোম্পানীতে কাজ করার মত হয়ে থাকে। কোম্পানীতে কাজ করবে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পাবে। কিন্তু আমি যেটা করি, টিমে স্বচ্ছতা থাকার জন্য প্রতিমাসে বিলের যে PDF ফাইল পাই, তা মেইল করে সবাইকে পাঠিয়ে দেই। তখন সবাই দেখতে পারে কে কত ঘন্টা কাজ করেছে, কত রেটে কাজ করেছে, মোট কত আয় করেছে ইত্যাদি। তবে ওডেস্ক এটা করতে কখনও অনুমতি দেয় না।
জাকারিয়া: আপনাদের গ্রুপে যোগ দিতে হলে নূন্যতম কি কি জানতে হবে?
মামুন: কম্পিউটারের বেসিক কাজগুলো এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারলেই যথেষ্ঠ। আসলে আমরা যে সকল সদস্য নেই তারা Notepad কি তাই অনেক সময় জানে না। একজনকে আমি বলেছিলাম আপনি Notepad চালু করেন। সে বলল, ভাই আমার কম্পিউটারে Notepad ইন্সটল করা নাই। সে পরবর্তীতে আমাদের সুপারভাইজার পদে নিয়োগ পেয়েছে। তাকে সেভাবে দক্ষ করে নেয়া হয়েছে।
আমার টিমে যোগ দেয়ার কয়েকটা শর্ত আছে -
১) ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে। কারণ মাসের ৭-১০ তারিখ ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে সদস্যদের টাকা দেয়া হয়।
২) সিটিসেল মোবাইল সংযোগ থাকতে হবে, কম খরচে কথা বলার জন্য। আমাদের দেশে ইন্টারনেটের স্পীড যদি আরেকটু বেশি থাকত তাহলে আমরা অনায়াসেই ভয়েস কন্ফারেন্স করতে পারতাম।
৩) যে কোন আদেশ বিনা বাক্যে পালন করতে হবে।
জাকারিয়া: প্রশিক্ষণটা কিভাবে দিয়ে থাকেন?
মামুন: আমাদের বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে। আমাদের কয়েকটি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে যাতে কিভাবে বিড করতে হবে, কিভাবে প্রোফাইল সাজাতে হবে ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে। বিড করার পর বায়ারের সাথে যোগাযোগের উপর কয়েকটা টিউটোরিয়াল রয়েছে। টিউটোরিয়ালগুলো আমাদের নিজস্ব সার্ভারে আপলোড করা আছে, আমরা তাদেরকে লিংকগুলো দিয়ে দেই। টিউটোরিয়ালগুলো বাংলাতে আমি নিজেই তৈরি করেছি। নতুন কাজের ক্ষেত্রে টিউটোরিয়াল তৈরি করা হয় না, সেক্ষেত্রে ফোনে তাদেরকে বুঝিয়ে দেই। সাথে টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার দিয়ে দেখিয়ে দেই কোথায় কোথায় ক্লিক করে কাজ করতে হবে।
জাকারিয়া: তাদেরকে ইংরেজিটা কতটুকু জানতে হয় বা না জানলে হয় কি না?
মামুন: আসলে তাদেরকে ইংরেজি না জানলেও চলে। টিমের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে নির্দেশনা বোঝার কোন ঝামেলা হয় না। ক্লায়েন্ট ইমেইল পাবার পর আমাকে ফোন করলে আমি সাথে সাথে তা বুঝিয়ে দেই। আর বিড করার জন্য তাদেরকে একটা কভার লেটার তৈরি করে দেই।
জাকারিয়া: আপনাদের টিমে মেয়েদের কাজের পারফর্মেন্স কি রকম?
মামুন: বর্তমানে ৪ জন মেয়ে আমাদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। পুরুষদের চেয়ে মেয়েরা খুব সৎভাবে এখানে কাজ করেন।
জাকারিয়া: টিমের অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কে একটু বলুন।
মামুন: টিমে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই শিক্ষার্থী। ফলে পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমরাদেরকে কম প্রজেক্টে কাজ করতে হয়। তখন প্রায় মাসখানেকের মত বিড করা বন্ধ করে দেই। টিমে ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন পাঁচজন। আমার যে ম্যানেজার উনার বাড়ি হল নারায়নগঞ্জে। গ্রাফিক্স ডিজাইনার মিরপুর থেকে কাজ করেন। বেশিরভাগ সদস্যই ঢাকাতে অবস্থিত, আমিই শুধুমাত্র খুলনাতে।
জাকারিয়া: আপনাদের এত বড় টিমের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য কোন ফোরাম কি আছে?
মামুন: এজন্য গুগল গ্রুপে "আলফা ডিজিটাল প্রজেক্ট" নামে আমাদের একটা গ্রুপ আছে। এটা একটা প্রাইভেট গ্রুপ যাতে যে কেউ যোগ দিতে পারে না। প্রজেক্টগুলো আমরা এই গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করে থাকি।
জাকারিয়া: টিম পরিচালনার পাশাপাশি আপনি কি অন্য কোন কাজ করছেন?
মামুন: না না, এই সকল কাজ করেই আর সময় পাই না।
জাকারিয়া: টিমের মাধ্যমে কাজ করার সময় কোন ধরনের সমস্যা হয় কি?
মামুন: আমি প্রায় সময় একটা সমস্যায় পড়ি, তা হচ্ছে কেউ যখন কোন ভুল করে তখন তাকে অনলাইনে শাস্তি দেয়ার কোন উপায় থাকে না। সর্বোচ্চ ফোনে দুইটা বকা দেয়া যায়। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, অদক্ষ লোক নিয়ে কাজ করার সময় এরা কিছুদিন পর নিজে আলাদাভাবে কাজ করা শুরু করে দেয়। সেক্ষেত্রে টিমটা আর বড় হয় না। সবার মধ্যে একতা থাকলে শীর্ষ অবস্থানটা অনায়াসে ধরে রাখা যেত। কিছুদিন আগেও আমরা ওডেস্কের শীর্ষ দশে ছিলাম, এখন আমাদের স্কোর অনেক কমে গেছে। টিমে সবাইতো আর সৎভাবে কাজ করে না। যেমন একটা প্রজেক্টে বায়ার বলেছিল আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে, তার সার্ভারে একটা কাজ চলছে। তখন টিমের একজন ওডেস্কের টিম সফটওয়্যারটি প্রায় ৫ ঘন্টা চালিয়ে রেখে বায়ারকে বলেছিল সে কাজ করেছে এবং সে অনুযায়ী বিল করে দেয়। আসলে তখন সে কোন কাজই করেনি। ওই কাজে ১২ জন মেম্বার কাজ করত, বায়ার তখন সবাইকে ৫ এর মধ্য ১ ফিডব্যাক দিয়ে দেয়। এখন চিন্তা করেন ১২ জনের ফিডব্যাক যদি ১ করে পড়ে তাহলে কোম্পানীর প্রোফাইল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আমাদের গড় ফিডব্যাক ২ এর কাছাকাছি চলে আসে। এরপর দীর্ঘ ৩ মাস কাজ করতে করতে এখন ৩.৭৮ এ উঠে এসেছে।
ওডেস্কে দুই ধরনের কাজ পাওয়া যায় - Fixed এবং Hourly Job। ওডেস্কে কাজের সমস্যার মধ্যে আরেকটা হচ্ছে এখানে Fixed Job প্রজেক্টে টাকা পাবার গ্যারান্টি পাওয়া যায় না। অনেক বায়ার আছে যারা মধুর মধুর কথা বলে Fixed Job প্রজেক্টগুলো করায়। কাজ শেষে আর টাকা দেয় না। গত মাসে এভাবে আমি ৭৫০ ডলার লোকসান করেছি। ওডেস্কে Fixed Job কাজ না করে শুধুমাত্র Hourly Job গুলো করা উচিৎ। এই সাইটে অন্যান্য সাইটের মত Escrow তে টাকা জমা রাখার সুবিধা নেই। এটা নতুনদের খেয়াল রাখা উচিৎ।
জাকারিয়া: টিমে কাজ করার ক্ষেত্রে মজা কিরকম?
মামুন: মজা তো অনেক। আসলে এই লাইনে কাজ করতে এসে অনেক অনেক সম্মান পেয়েছি, যেটা আমি আমার চাকুরী জীবনে পাইনি। এইটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া, টাকা পয়সা পাই বা না পাই। আমাদের সম্পন্ন করা সকল প্রজেক্টের মধ্যে সেরা এবং আনন্দদায়ক প্রজেক্ট হলো- "টেলিকমিনেকেশন সার্ভে"। এই প্রজেক্ট এ আমরা নরওয়ের এক বায়ারের হয়ে বাংলাদেশের সকল মোবাইল কোম্পানীর উপর সার্ভে করেছিলাম। গ্রামীন ফোন, বাংলালিঙ্ক, ওয়ারিদ, সিটিসেল, একটেল এবং টেলিটক কোম্পানীর মধ্যে কার কল রেট কেমন, কে কি কি সুবিধা দিচ্ছে, কে কে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়, কোন কোম্পানীর শতকরা গ্রাহক কত, কার কভারেজ কেমন - এই সকল বিষয় এর উপর আমরা রিপোর্ট করি। এই প্রজেক্টে আমরা ৪ মাসের অধিক সময় কাজ করি। সেই বায়ার বাংলাদেশে অনেক বড় একটা ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিল। এখন তারা ফিলিপাইন এ কাজ করছে।
জাকারিয়া: ওডেস্কে টিম নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মামুন: এই টিমকে আমি অনেক বড় করব। ওডেস্কে একটা টিম আছে যারা প্রায় ১১ লক্ষ ঘন্টা কাজ করে ফেলেছে। সেখানে আমরা মাত্র ১৩ হাজার ঘন্টা কাজ করেছি। ওরা অবশ্য ২০০১ সাল থেকে ওডেস্কে কাজ করছে। আমরা এক বছরে এই অবস্থানে এসেছি। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে আমরাও এরকম একটা পর্যায়ে যাব, ওডেস্কের মধ্যে শক্ত একটা অবস্থান।
"আলফা ডিজিটাল" টিমের ওডেস্ক প্রোফাইলের ঠিকানা হচ্ছে www.alphadigital.tk।
দৃষ্টি আকর্ষণ - "আলফা ডিজিটাল" টিমে এই মূহুর্তে আর কোন নতুন মেম্বার নেয়া হচ্ছে না। টিম মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের গ্রুপে যোগদান করতে পারেন।
http://groups.google.com/group/odesk-bangladesh
লেখক - মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "মে ২০১০" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
Dec 15
ডাটা এন্ট্রির কাজ কোথায় পাওয়া যায় তা জানতে অনেকেই আমাকে ইমেইল করেন। আমি ডাটা এন্ট্রি কাজ করতে কাউকে উৎসাহ দেই না। কারণ এই কাজগুলো পাওয়া খুব কঠিন হয়ে থাকে। তাছাড়া কাজগুলো একঘেয়ে হয় এবং এর মাধ্যমে খুব বেশি আয় করা যায় না। আমি তাই সবাইকে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার পরামর্শ দেই। তবে এটা সত্য যে গ্রাফিক্সের কাজগুলো সহজ নয়। এর জন্য অনেক দক্ষতা এবং চর্চার প্রয়োজন রয়েছে, যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো করার প্রবণতা থেকেই যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি সবাইকে গেট-এ-ফ্রিল্যান্সার থেকে কাজ করার পরামর্শ দেই। কিন্তু এখানেও মূল সেই সমস্যাটি থেকেই যাচ্ছে, কাজ পাওয়া খুব কঠিন। প্রথম কাজ পেতে আপনাকে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি এক মাসও অপেক্ষা করতে হতে পারে।
আজকে আপনাদেরকে যে সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব তা থেকে কাজ পেতে কোন অপেক্ষা করতে হবে না। এই মূহুর্ত থেকেই কাজে লেগে যেতে পারবেন। সাইটটি হচ্ছে - www.microworkers.com। প্রথম দর্শনে সাইটটিকে আমার খুবই চমৎকার এবং সহজ মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সাররা এই সাইটকে স্বাদরে গ্রহণ করবে।
মূল বেশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে -
কাজের প্রকারভেদ:
সাইটে যে ধরনের কাজ পাওয়া যায় এবং সেগুলোর সর্বনিম্ন মূল্য নিচে দেয়া হল -
সাইটটি সম্পর্কে ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখেছি। বেশিরভাগই এটিকে ভাল বলেছে। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে দেখলাম এই সাইটের ক্লোন করে আরো সাইট তৈরি হচ্ছে। ফলে আমার বিশ্বাস এই সাইট থেকে সত্যি সত্যি টাকা উপার্জন করা সম্ভব। সাইটটি পরীক্ষা করতে গিয়ে আমি দুটি কাজ করেছি। আমার ইচ্ছে আছে অন্তত ৯ ডলার আয় করে দেখা আসলেই তারা টাকা দেয় কিনা। যদিও এটি করতে গিয়ে আমার যথেষ্ঠ সময় কিছুটা ব্যয় হবে, যেখানে আমি প্রোগ্রামিং করে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি আয় করি। তারপরও এই সাইট থেকে টাকা পেলে যারা ডাটা এন্ট্রি কাজ করতে চান তাদেরকে একটা সহজ রাস্তা বলে দিতে পারব।
আপনারা সাইটটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হলে এই লেখায় মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন, আমি চেষ্টা করব উত্তর দিতে। আর কেউ টাকা উত্তোলন করতে পারলে অবশ্যই জানাবেন।
সাইটটি কিভাবে কাজ করে তা নিচের কার্টুনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে -
আজকে আপনাদেরকে যে সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব তা থেকে কাজ পেতে কোন অপেক্ষা করতে হবে না। এই মূহুর্ত থেকেই কাজে লেগে যেতে পারবেন। সাইটটি হচ্ছে - www.microworkers.com। প্রথম দর্শনে সাইটটিকে আমার খুবই চমৎকার এবং সহজ মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সাররা এই সাইটকে স্বাদরে গ্রহণ করবে।
মূল বেশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে -
- এখানে কাজ করার জন্য কোন বিড করতে হয় না।
- কাজগুলো খুবই ছোট হয়ে থাকে, প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করতে সাধারণত ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগবে।
- কাজটি আপনি সত্যি সম্পন্ন করেছেন কিনা তার একটি প্রমাণ দিতে হয়। এজন্য কাজের বর্ণনার নিচে "I accept this job" লিংকে ক্লিক করলে একটি টেক্সটবক্স দেখাবে। কিভাবে প্রমাণ দিবেন তার বর্ণনা কাজের বর্ণনার সাথেই পাবেন।
- কাজগুলো যেহেতু ছোট তাই অর্থের পরিমাণও সামান্য, প্রতিটি কাজ ০.১০ ডলার থেকে শুরু করে ১.৫০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- প্রায় প্রতি ঘন্টায় নতুন নতুন কাজ আসে।
- একটি কাজ একবারই করতে পারবেন।
- মোট আয় ৯ ডলার হলে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
- চারটি পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলন করা যায় - চেক, মানিবুকারস, পেপাল এবং অল্টারপে।
- প্রথমবার অর্থ উত্তোলন করতে গেলে আপনার ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হবে, যাতে একটি Pin নাম্বার দেয়া থাকবে। এই পদ্ধতিতে আপনার ঠিকানা যাচাই এবং একজন ব্যবহারকারী যাতে দুটি একাউন্ট করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হয়।
কাজের প্রকারভেদ:
সাইটে যে ধরনের কাজ পাওয়া যায় এবং সেগুলোর সর্বনিম্ন মূল্য নিচে দেয়া হল -
- Visit my site + Comment $0.10: কাজের বর্ণনায় উল্লেখিত ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট শব্দের মন্তব্য দিতে হবে।
- Follow my Twitter $0.10: বর্ণনায় উল্লেখিত একটি Twitter একাউন্ট কে Follow করা, এজন্য twitter.com এ আপনার একটি একাউন্ট থাকতে হবে।
- Simple sign up (2 fields) $0.10: বর্ণনায় উল্লেখিত সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করা, যাতে মাত্র দুটি তথ্য দিতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় একটি ইমেইল ঠিকানা দিতে হয়। আমার পরামর্শ হল এই ধরনের কাজের জন্য ভিন্ন একটি একাউন্ট তৈরি করে সেটি দেয়ে রেজিষ্ট্রেশন করুন। অন্যথায় স্পাম ইমেইলের কারণে আপনার দরকারী ইমেইল খোঁজে পাবেন না।
- Complex Sign up $0.15: উল্লেখিত সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করা, যাতে বেশি তথ্য দিতে হবে।
- Digg my page $0.10: কোন একটি সাইটের পৃষ্ঠার জন্য Digg করা। এজন্য আপনার Digg.com এ একাউন্ট থাকতে হবে।
- Text link to a website $0.20: ক্লায়েন্টের সাইটের URL আপনার কোন সাইট বা ব্লগের সাথে লিংক দেয়া, অথবা ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী অন্য কোন ফোরামে পোস্ট করা।
- Review of my site + Link $0.30: ক্লায়েন্টে সাইট নিয়ে আপনার ব্লগে ইংরেজিতে একটি পোস্ট এবং তার লিংক দেয়া।
- Download and Install $0.50 : কোন সফটওয়্যার ডাউনলোড এবং ইন্সটল করা।
সাইটটি সম্পর্কে ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখেছি। বেশিরভাগই এটিকে ভাল বলেছে। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে দেখলাম এই সাইটের ক্লোন করে আরো সাইট তৈরি হচ্ছে। ফলে আমার বিশ্বাস এই সাইট থেকে সত্যি সত্যি টাকা উপার্জন করা সম্ভব। সাইটটি পরীক্ষা করতে গিয়ে আমি দুটি কাজ করেছি। আমার ইচ্ছে আছে অন্তত ৯ ডলার আয় করে দেখা আসলেই তারা টাকা দেয় কিনা। যদিও এটি করতে গিয়ে আমার যথেষ্ঠ সময় কিছুটা ব্যয় হবে, যেখানে আমি প্রোগ্রামিং করে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি আয় করি। তারপরও এই সাইট থেকে টাকা পেলে যারা ডাটা এন্ট্রি কাজ করতে চান তাদেরকে একটা সহজ রাস্তা বলে দিতে পারব।
আপনারা সাইটটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হলে এই লেখায় মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন, আমি চেষ্টা করব উত্তর দিতে। আর কেউ টাকা উত্তোলন করতে পারলে অবশ্যই জানাবেন।
সাইটটি কিভাবে কাজ করে তা নিচের কার্টুনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে -
Dec 14
তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাটা এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ডাটা এন্ট্রি (Data Entry) হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডাটা একটি স্থান/প্রোগ্রাম থেকে অন্য আরকটি স্থানে/প্রোগ্রামে প্রতিলিপি তৈরি করা। ডাটাগুলো হতে পারে হাতে লেখা কোন তথ্যকে কম্পিউটারে টাইপ করা অথবা কম্পিউটারের কোন একটি প্রোগ্রামের ডাটা একটি স্প্রেডশীট ফাইলে সংরক্ষণ করা। কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু থেকেই ডাটা এন্ট্রির ধারনা চলে এসেছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে তথ্যের আদান প্রদান বিস্তৃত হয়েছে, সেই সাথে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের ডাটাকে সুবিসন্নস্ত করে এর বহুবিধ ব্যবহার। তাই দক্ষ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এধরনের কাজগুলো একা বা দলগতভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সাধারণ ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে যে কেউ এই ধরনের কাজ করে ঘরে বসেই বৈদিশিক মুদ্রা আয় করতে পারে।
কোথায় পাওয়া যাবে:
ডাটা এন্ট্রি এর কাজগুলো সাধারণ ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস সাইটেই পাওয়া যায়। অনেক ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে যাতে বলা হয় বিপুল পরিমাণে ডাটা এন্ট্রি এর কাজ পাওয়া যাবে। কিন্তু ওই সাইটে রেজিষ্ট্রশন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। যেহেতু রেজিষ্ট্রেশন করার পূর্বে আপনি জানতে পারছেন না সত্যিই ওই সাইটে কাজ পাওয়া যায় কি না, তাই এই ধরনের সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করা থেকে বিরত থাকাই ভাল। বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশন করে ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া যায় এরকম সাইট হচ্ছে - www.GetAFreelancer.com, www.oDesk.com, www.GetACoder.com, www.ScriptLance.com ইত্যাদি। এই সাইগুলোতে ডাটা এন্ট্রি কাজের আলাদা বিভাগ রয়েছে। সাইটগুলোতে কয়েকশত ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলারের প্রজেক্ট রয়েছে। সাধারণত 'প্রতি একহাজার ডাটা এন্ট্রির জন্য একটি নির্দিষ্ট ডলার' এই ভিত্তিতে কাজ পাওয়া যায়। অনেকক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা:
ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্টে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয় যা একটি প্রজেক্টের উপর নির্ভর করে। অনেক ধরনের প্রজেক্ট পাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র কপি-পেস্ট ছাড়া আর কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তবে সাধারণভাবে যে দক্ষতাগুলো সবসময় প্রয়োজন পড়বে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - দ্রুত টাইপিং করার ক্ষমতা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও বিশেষ করে মাইক্রোসফট এক্সেলে পরিপূর্ণ দখল এবং সর্বোপরি ইংরেজিতে ভাল জ্ঞান। তার সাথে রয়েছে ইন্টারনেটে সার্চ করে কোন একটি তথ্য খোঁজে পাবার দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, ফোরাম, ওয়েব ডাইরেক্টরী সম্পর্কে ভাল ধারণা।
ডাটা এন্ট্রি কাজের প্রকারভেদ:
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে যেসকল ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফাইল, ছবি ইত্যাদি আপলোড করা, বিভিন্ন সাইট থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য এক্সেলের একটি ফাইলে সংরক্ষণ করা, ওয়েবসাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আর্টিকেল লেখা, একটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফোরাম, গ্রুপে গিয়ে পরিচয় (Promote) করিয়ে দেয়া, দুটি ওয়েবসাইটের মধ্যে লিংক আদান প্রদান করা (Link Exchange), অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করা, OCR (অপটিক্যাল কারেক্টার রিকগনিশন) থেকে প্রাপ্ত লেখার ভুল সংশোধন করা ইত্যাদি।
নিচে ওডেস্ক এবং গেট-এ-ফ্রিল্যান্সার সাইটে গত নভেম্বর মাসে প্রাপ্ত কয়েকটি প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
১) লোকাল বিজনেসের তথ্য প্রদান: এই প্রজেক্টে বায়ারের (Buyer) রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে ইন্টারনেটে সার্চ করে যুক্তরাজ্যের একটি নির্দিষ্ট শহরের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ইত্যাদি তথ্য প্রদান করা। বায়ার এই তথ্যগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিং কাজে ব্যবহার করবে। এই প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটে ওই শহরের নাম দিয়ে সার্চ করতে হবে এবং প্রাপ্ত তথ্য একটি এক্সেল ফাইলে সেইভ করে বায়ারকে প্রদান করতে হবে। প্রজেক্টে বায়ারের বাজেট হচ্ছে ৫০ ডলার। তবে ঠিক কতটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রদান করতে হবে এবং কতদিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়া নেই।
২) ওয়েবসাইট থেকে ডাটা সংগ্রহ করা: এই প্রজেক্টে বায়ার কয়েকটি ওয়েবসাইটের তথ্য দিয়ে দিবে। প্রোভাইডার হিসেবে আপনার কাজ হবে ওই সাইটগুলো থেকে নির্দিষ্ট কিছু ডাটা আরেকটি ওয়েবসাইটের ফরমের মধ্য সেইভ করা। প্রতি ঘন্টায় এরকম ২০০ টি ডাটা এন্ট্রি করতে হবে, অর্থাৎ প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একটি ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। এই কাজটি করার জন্য কোন বিশেষ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, শুধু মাত্র কপি এবং পেস্ট করা জানলেই হবে। সম্পূর্ণ কাজের জন্য বায়ারের বাজেট হচ্ছে ১২০ ডলার।
৩) অডিও ট্রান্সক্রিপশন: এই প্রজেক্টে বায়ার পূর্বে রেকর্ডকৃত কয়েকটি অডিও (Audio) ফাইল দিবে। আপনার কাজ হবে অডিও শুনে ইংরেজিতে একটি ফাইলে লেখা বা প্রতিলিপি তৈরি করা। প্রতি ঘন্টার অডিও ফাইল প্রতিলিপির জন্য ২০ ডলার দেয়া হবে। এই কাজের জন্য ইংরেজিতে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে।
৪) ডকুমেন্ট কনভার্শন: এই প্রজেক্টে আপনাকে PDF ফরমেটের একটি ডকুমেন্ট ফাইল দেয়া হবে। আপনার কাজ হবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ওই লেখাগুলো হুবহু প্রতিলিপি করা। অর্থাৎ পিডিএফ এর লেখাটির ফরমেট, ছবি, ফুটনোট ইত্যাদি অপরিবর্তিতভাবে ওয়ার্ড ফাইলে প্রতিস্থাপন করা। এই কাজের জন্য গেট-এ-ফ্রিল্যান্সারে ২৭ টি বিড পড়েছে এবং গড় মূল্য হচ্ছে ৬৫ ডলার।
৫) ক্লাসিফাইড এড লিস্টিং: এই প্রজেক্টটি হচ্ছে একটি ক্লাসিফাইড বা শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন বিজ্ঞাপন যোগ করা। এজন্য Craigslist, Amazon, Ebay ইত্যাদি সাইট থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের তথ্য ওই ওয়েবসাইটটিতে যোগ করতে হবে এবং একটি এক্সেল স্প্রেডশীট ফাইলে এই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর পণ্যটির বিক্রেতার কাছে ইমেলই করে তাকে ওয়েবসাইটি সম্পর্কে জানাতে হবে। এরকম ৫০০ টি পণ্যের ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। এই কাজের জন্য বায়ারের সর্বোচ্চ বাজেট হচ্ছে ২৫০ ডলার।
৬) ক্যাপচা (Captcha) এন্ট্রি: ক্যাপচা হচ্ছে কয়েকটি অক্ষর ও সংখ্যার সমন্নয়ে একধরনের সিকিউরিটি কোড বা ছবি যা বিভিন্ন সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করার সময় প্রদান করতে হয়। কোন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে কেউ যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি সাইটে রেজিষ্ট্রেশন বা ফরম পূরণ করতে না পারে এজন্য এটি ব্যবহার করা হয়। গেট-এ-ফ্রিল্যান্সারে প্রাপ্ত এই কাজে দুইদিনের মধ্যে 36K বা ৩৬,০০০ হাজার ক্যাপচা এন্ট্রি করতে হবে। প্রতি 1K বা এক হাজারটি এন্ট্রি করার জন্য ১ ডলার দেয়া হবে অর্থাৎ মোট প্রজেক্টের মূল্য হচ্ছে ৩৬ ডলার। যেহেতু একার পক্ষে কম সময়ে এত ডাটা এন্ট্রি করা সম্ভব নয় তাই সম্পূর্ণ কাজটি করার জন্য ৫ থেকে ১০ জনের একটি টিম থাকতে হবে। দুই দিনের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করতে পারলে বায়ার পরবর্তীতে 1200K অর্থাৎ ১২,০০,০০০ ক্যাপচা এন্ট্রি করার কাজ দিবে যা দুই সপ্তাহের মধ্যে করতে হবে।
অসুবিধাসমূহ:
যদিও ডাটা এন্ট্রি এর কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ কিন্তু এই ধরনের কাজে অনেক ধরনের অসুবিধা রয়েছে, যা পূর্বে বিবেচনা করেই কাজে নামা উচিত:
প্রোগ্রামিং করে ডাটা এন্ট্রি:
অনেক ডাটা এন্ট্রি কাজ রয়েছে যা প্রোগ্রামিং করে করা সম্ভব। প্রোগ্রামিং এ যারা দক্ষ তারাও ইচ্ছে করলে ডাটা এন্ট্রের কাজগুলো সহজেই করতে পারবে। এক্ষেত্রে আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ২,৫০০ টি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের লিংক এনে দেয়া যাদের ওয়েবসাইটে কোন সিকিউরিটি সিল (এক ধরনের ছবি) নেই। ক্লায়েন্টের উদ্দেশ্য ছিল তাদের কাছে তার নিজের কোম্পানির সিকিউরিটি সিল বিক্রির জন্য ইমেইল দেয়া। প্রজেক্টের মোট মূল্য ছিল ৩০০ ডলার এবং ডেডলাইন ছিল মাত্র ৭ দিন। এই প্রজেক্টটি খুবই সময় সাপেক্ষ ছিল। কারণ সার্চ করে ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ সাইটে যেতে হবে এবং সেই সাইটগুলোতে গিয়ে দেখতে হবে তাদের সাইটে কোন সিকিউরিটি সিল আছে কিনা। ধরা যাক সমস্ত কাজ করতে প্রতি সাইটের পেছনে যদি ১ মিনিট করে সময় ব্যয় হয়, তাহলে ৫,০০০ সাইটের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা কাজ করে একজন অপারেটেরর মোট সময় লাগবে ১০ দিন। কাজটি আমি ম্যানুয়ালি না করে প্রোগ্রামিং করে সম্পন্ন করার স্বীদ্ধান্ত নিলাম এবং PHP দিয়ে দুটি প্রোগ্রাম তৈরি করলাম - একটি প্রোগ্রাম গুগল এবং ইয়াহু ডাইরেক্টরি থেকে সার্চ করে ওই দুই দেশের ই-কমার্সের সাইটের তথ্য একটি ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করবে। আরেকটি প্রোগ্রাম ডাটাবেইজ থেকে তথ্যগুলো নিয়ে একটি একটি করে সাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাবে এবং ওই সাইটে কোন সিকিউরিটি সিল আছে কিনা যাচাই করে দেখবে। প্রোগ্রামটি তৈরি করার পর আমি আমার সার্ভারে Cron Job এর মাধ্যমে দুটি প্রোগ্রামকে চালাই। এই পদ্ধতিতে প্রোগ্রামিং করা থেকে সার্চ করা পর্যন্ত মোট সময় লেগেছিল মাত্র দুই দিন এবং প্রোগ্রামটির মাধ্যমে এই সময়ের মধ্যে ৮,০০০ সাইটে সার্চ করে ৪,০০০ টি সিলবিহীন সাইট পেয়েছিলাম।
বাস্তবিক পক্ষে ডাটা এন্ট্রি কাজের রয়েছে বিশাল চাহিদা এবং কাজের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত। প্রথমদিকে একটু ধৈর্য্য সহকারে বিড করা এবং কাজ বাছাই করার ক্ষেত্রে একটু বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও বড় প্রজেক্ট পাবার সম্ভাবনা রয়েছে সেই প্রজেক্ট পাবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুরুতে একাই কাজ করুন। ভবিষ্যতে বড় কাজ পেলে কয়েকজন কম্পিউটার অপারেটরকে নিয়ে একটি টিম গঠন করাতে পারেন। তখন ডাটা এন্ট্রির কাজগুলোর মাধ্যমে বেকার জনগণকে জনশক্তিতে পরিণত করতে আপনিও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।
কোথায় পাওয়া যাবে:
ডাটা এন্ট্রি এর কাজগুলো সাধারণ ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস সাইটেই পাওয়া যায়। অনেক ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে যাতে বলা হয় বিপুল পরিমাণে ডাটা এন্ট্রি এর কাজ পাওয়া যাবে। কিন্তু ওই সাইটে রেজিষ্ট্রশন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। যেহেতু রেজিষ্ট্রেশন করার পূর্বে আপনি জানতে পারছেন না সত্যিই ওই সাইটে কাজ পাওয়া যায় কি না, তাই এই ধরনের সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করা থেকে বিরত থাকাই ভাল। বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশন করে ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া যায় এরকম সাইট হচ্ছে - www.GetAFreelancer.com, www.oDesk.com, www.GetACoder.com, www.ScriptLance.com ইত্যাদি। এই সাইগুলোতে ডাটা এন্ট্রি কাজের আলাদা বিভাগ রয়েছে। সাইটগুলোতে কয়েকশত ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলারের প্রজেক্ট রয়েছে। সাধারণত 'প্রতি একহাজার ডাটা এন্ট্রির জন্য একটি নির্দিষ্ট ডলার' এই ভিত্তিতে কাজ পাওয়া যায়। অনেকক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা:
ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্টে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয় যা একটি প্রজেক্টের উপর নির্ভর করে। অনেক ধরনের প্রজেক্ট পাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র কপি-পেস্ট ছাড়া আর কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তবে সাধারণভাবে যে দক্ষতাগুলো সবসময় প্রয়োজন পড়বে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - দ্রুত টাইপিং করার ক্ষমতা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও বিশেষ করে মাইক্রোসফট এক্সেলে পরিপূর্ণ দখল এবং সর্বোপরি ইংরেজিতে ভাল জ্ঞান। তার সাথে রয়েছে ইন্টারনেটে সার্চ করে কোন একটি তথ্য খোঁজে পাবার দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, ফোরাম, ওয়েব ডাইরেক্টরী সম্পর্কে ভাল ধারণা।
ডাটা এন্ট্রি কাজের প্রকারভেদ:
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে যেসকল ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফাইল, ছবি ইত্যাদি আপলোড করা, বিভিন্ন সাইট থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য এক্সেলের একটি ফাইলে সংরক্ষণ করা, ওয়েবসাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আর্টিকেল লেখা, একটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফোরাম, গ্রুপে গিয়ে পরিচয় (Promote) করিয়ে দেয়া, দুটি ওয়েবসাইটের মধ্যে লিংক আদান প্রদান করা (Link Exchange), অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করা, OCR (অপটিক্যাল কারেক্টার রিকগনিশন) থেকে প্রাপ্ত লেখার ভুল সংশোধন করা ইত্যাদি।
নিচে ওডেস্ক এবং গেট-এ-ফ্রিল্যান্সার সাইটে গত নভেম্বর মাসে প্রাপ্ত কয়েকটি প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
১) লোকাল বিজনেসের তথ্য প্রদান: এই প্রজেক্টে বায়ারের (Buyer) রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে ইন্টারনেটে সার্চ করে যুক্তরাজ্যের একটি নির্দিষ্ট শহরের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ইত্যাদি তথ্য প্রদান করা। বায়ার এই তথ্যগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিং কাজে ব্যবহার করবে। এই প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটে ওই শহরের নাম দিয়ে সার্চ করতে হবে এবং প্রাপ্ত তথ্য একটি এক্সেল ফাইলে সেইভ করে বায়ারকে প্রদান করতে হবে। প্রজেক্টে বায়ারের বাজেট হচ্ছে ৫০ ডলার। তবে ঠিক কতটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রদান করতে হবে এবং কতদিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়া নেই।
২) ওয়েবসাইট থেকে ডাটা সংগ্রহ করা: এই প্রজেক্টে বায়ার কয়েকটি ওয়েবসাইটের তথ্য দিয়ে দিবে। প্রোভাইডার হিসেবে আপনার কাজ হবে ওই সাইটগুলো থেকে নির্দিষ্ট কিছু ডাটা আরেকটি ওয়েবসাইটের ফরমের মধ্য সেইভ করা। প্রতি ঘন্টায় এরকম ২০০ টি ডাটা এন্ট্রি করতে হবে, অর্থাৎ প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একটি ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। এই কাজটি করার জন্য কোন বিশেষ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, শুধু মাত্র কপি এবং পেস্ট করা জানলেই হবে। সম্পূর্ণ কাজের জন্য বায়ারের বাজেট হচ্ছে ১২০ ডলার।
৩) অডিও ট্রান্সক্রিপশন: এই প্রজেক্টে বায়ার পূর্বে রেকর্ডকৃত কয়েকটি অডিও (Audio) ফাইল দিবে। আপনার কাজ হবে অডিও শুনে ইংরেজিতে একটি ফাইলে লেখা বা প্রতিলিপি তৈরি করা। প্রতি ঘন্টার অডিও ফাইল প্রতিলিপির জন্য ২০ ডলার দেয়া হবে। এই কাজের জন্য ইংরেজিতে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে।
৪) ডকুমেন্ট কনভার্শন: এই প্রজেক্টে আপনাকে PDF ফরমেটের একটি ডকুমেন্ট ফাইল দেয়া হবে। আপনার কাজ হবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ওই লেখাগুলো হুবহু প্রতিলিপি করা। অর্থাৎ পিডিএফ এর লেখাটির ফরমেট, ছবি, ফুটনোট ইত্যাদি অপরিবর্তিতভাবে ওয়ার্ড ফাইলে প্রতিস্থাপন করা। এই কাজের জন্য গেট-এ-ফ্রিল্যান্সারে ২৭ টি বিড পড়েছে এবং গড় মূল্য হচ্ছে ৬৫ ডলার।
৫) ক্লাসিফাইড এড লিস্টিং: এই প্রজেক্টটি হচ্ছে একটি ক্লাসিফাইড বা শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন বিজ্ঞাপন যোগ করা। এজন্য Craigslist, Amazon, Ebay ইত্যাদি সাইট থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের তথ্য ওই ওয়েবসাইটটিতে যোগ করতে হবে এবং একটি এক্সেল স্প্রেডশীট ফাইলে এই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর পণ্যটির বিক্রেতার কাছে ইমেলই করে তাকে ওয়েবসাইটি সম্পর্কে জানাতে হবে। এরকম ৫০০ টি পণ্যের ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। এই কাজের জন্য বায়ারের সর্বোচ্চ বাজেট হচ্ছে ২৫০ ডলার।
৬) ক্যাপচা (Captcha) এন্ট্রি: ক্যাপচা হচ্ছে কয়েকটি অক্ষর ও সংখ্যার সমন্নয়ে একধরনের সিকিউরিটি কোড বা ছবি যা বিভিন্ন সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করার সময় প্রদান করতে হয়। কোন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে কেউ যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি সাইটে রেজিষ্ট্রেশন বা ফরম পূরণ করতে না পারে এজন্য এটি ব্যবহার করা হয়। গেট-এ-ফ্রিল্যান্সারে প্রাপ্ত এই কাজে দুইদিনের মধ্যে 36K বা ৩৬,০০০ হাজার ক্যাপচা এন্ট্রি করতে হবে। প্রতি 1K বা এক হাজারটি এন্ট্রি করার জন্য ১ ডলার দেয়া হবে অর্থাৎ মোট প্রজেক্টের মূল্য হচ্ছে ৩৬ ডলার। যেহেতু একার পক্ষে কম সময়ে এত ডাটা এন্ট্রি করা সম্ভব নয় তাই সম্পূর্ণ কাজটি করার জন্য ৫ থেকে ১০ জনের একটি টিম থাকতে হবে। দুই দিনের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করতে পারলে বায়ার পরবর্তীতে 1200K অর্থাৎ ১২,০০,০০০ ক্যাপচা এন্ট্রি করার কাজ দিবে যা দুই সপ্তাহের মধ্যে করতে হবে।
অসুবিধাসমূহ:
যদিও ডাটা এন্ট্রি এর কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ কিন্তু এই ধরনের কাজে অনেক ধরনের অসুবিধা রয়েছে, যা পূর্বে বিবেচনা করেই কাজে নামা উচিত:
- প্রথমত এই ধরনের কাজে অনেক বেশি বিড পড়ে, তাই প্রথম অবস্থায় কাজ পাওয়া খুব কঠিন। এই ধরনের কাজে আপনার মেধা বা দক্ষতা প্রমাণের প্রাথমিকভাবে কোন সুযোগ নেই। তবে ছোটখাট কয়েকটা কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে ফেলতে পারলে একই বায়ারের কাছ থেকে আরো অনেক কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ডাটা এন্ট্রি কাজগুলো সময়সাপেক্ষ, একঘেয়ে এবং প্রায় ক্ষেত্রে বিরক্তিকর।
- অনেক কাজের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের স্পীড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যেসব কাজে ফাইল আপলোড করতে হয় অথবা যে কাজগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, সেক্ষেত্রে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন রয়েছে।
- অনেক ডাটা এন্ট্রির কাজ রয়েছে যা একার পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়। এজন্য ৫ থেকে ১০ জনের একটা টিম গঠন করার প্রয়োজন পড়তে পারে।
- ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো খুবই সতর্কতার সাথে এবং নির্ভুলভাবে করতে হয়। তাই শতভাগ নির্ভুল টাইপিং এবং কাজের সময় পূর্ণ মনযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোগ্রামিং করে ডাটা এন্ট্রি:
অনেক ডাটা এন্ট্রি কাজ রয়েছে যা প্রোগ্রামিং করে করা সম্ভব। প্রোগ্রামিং এ যারা দক্ষ তারাও ইচ্ছে করলে ডাটা এন্ট্রের কাজগুলো সহজেই করতে পারবে। এক্ষেত্রে আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ২,৫০০ টি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের লিংক এনে দেয়া যাদের ওয়েবসাইটে কোন সিকিউরিটি সিল (এক ধরনের ছবি) নেই। ক্লায়েন্টের উদ্দেশ্য ছিল তাদের কাছে তার নিজের কোম্পানির সিকিউরিটি সিল বিক্রির জন্য ইমেইল দেয়া। প্রজেক্টের মোট মূল্য ছিল ৩০০ ডলার এবং ডেডলাইন ছিল মাত্র ৭ দিন। এই প্রজেক্টটি খুবই সময় সাপেক্ষ ছিল। কারণ সার্চ করে ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ সাইটে যেতে হবে এবং সেই সাইটগুলোতে গিয়ে দেখতে হবে তাদের সাইটে কোন সিকিউরিটি সিল আছে কিনা। ধরা যাক সমস্ত কাজ করতে প্রতি সাইটের পেছনে যদি ১ মিনিট করে সময় ব্যয় হয়, তাহলে ৫,০০০ সাইটের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা কাজ করে একজন অপারেটেরর মোট সময় লাগবে ১০ দিন। কাজটি আমি ম্যানুয়ালি না করে প্রোগ্রামিং করে সম্পন্ন করার স্বীদ্ধান্ত নিলাম এবং PHP দিয়ে দুটি প্রোগ্রাম তৈরি করলাম - একটি প্রোগ্রাম গুগল এবং ইয়াহু ডাইরেক্টরি থেকে সার্চ করে ওই দুই দেশের ই-কমার্সের সাইটের তথ্য একটি ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করবে। আরেকটি প্রোগ্রাম ডাটাবেইজ থেকে তথ্যগুলো নিয়ে একটি একটি করে সাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাবে এবং ওই সাইটে কোন সিকিউরিটি সিল আছে কিনা যাচাই করে দেখবে। প্রোগ্রামটি তৈরি করার পর আমি আমার সার্ভারে Cron Job এর মাধ্যমে দুটি প্রোগ্রামকে চালাই। এই পদ্ধতিতে প্রোগ্রামিং করা থেকে সার্চ করা পর্যন্ত মোট সময় লেগেছিল মাত্র দুই দিন এবং প্রোগ্রামটির মাধ্যমে এই সময়ের মধ্যে ৮,০০০ সাইটে সার্চ করে ৪,০০০ টি সিলবিহীন সাইট পেয়েছিলাম।
বাস্তবিক পক্ষে ডাটা এন্ট্রি কাজের রয়েছে বিশাল চাহিদা এবং কাজের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত। প্রথমদিকে একটু ধৈর্য্য সহকারে বিড করা এবং কাজ বাছাই করার ক্ষেত্রে একটু বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও বড় প্রজেক্ট পাবার সম্ভাবনা রয়েছে সেই প্রজেক্ট পাবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুরুতে একাই কাজ করুন। ভবিষ্যতে বড় কাজ পেলে কয়েকজন কম্পিউটার অপারেটরকে নিয়ে একটি টিম গঠন করাতে পারেন। তখন ডাটা এন্ট্রির কাজগুলোর মাধ্যমে বেকার জনগণকে জনশক্তিতে পরিণত করতে আপনিও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।
Aug 30
ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে কয়েকটি মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটি প্রজেক্টে আমাকে বলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ২,৫০০ টি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের লিংক এনে দিতে যাদের সাইটে কোন সিকিউরিটি সিল নেই। ক্লায়েন্টের উদ্দেশ্য ছিল তাদের কাছে তার কোম্পানির সিকিউরিটি সিল বিক্রির জন্য ইমেইল দেয়া। এই প্রজেক্টটি খুবই সময় সাপেক্ষ ছিল। কারণ সার্চ করে ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ সাইটে যেতে হবে এবং সেই সাইট গুলোতে গিয়ে দেখতে হবে তাদের সাইটে কোন সিকিউরিটি কোড আছে কিনা। ধরা যাক সমস্ত কাজ করতে প্রতি সাইটের পেছনে যদি ১ মিনিট করে সময় ব্যয় হয়, তাহলে ৫,০০০ সাইটের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা কাজ করে মোট সময় লাগবে ১০ দিন। প্রজেক্টের মোট মূল্য ছিল ৩০০ ডলার। এই কাজগুলো করার জন্য আমি একজন কম্পিউটার অপারেটেরর সাথে কথা বলছিলাম যে অনেক কম খরচে আমাকে এই কাজগুলো করে দিতে রাজি হয়েছিল।কিন্তু আরেকটি ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গিয়েছিল। প্রজেক্টের ডেডলাইন সময় ছিল মাত্র ৭ দিন। তাই আমি দুই জন অপারেটর নিয়োগ দেবার চিন্তা করছিলাম। দুই জন আট ঘন্টা করে কাজ করলে ৫ দিনে কাজটি করা সম্ভব। এই অবস্থায় হঠাৎ একটা বিষয় আমার মাথায় এল, আচ্ছা এটা কি প্রোগ্রামিং করে করা যাবে? আমি আমার টিমের প্রোগ্রামারদের সাথে কথা বলে একটি আইডিয়া বের করলাম। আমরা দুটি প্রোগ্রাম তৈরি করলাম - একটি প্রোগ্রাম গুগল এবং ইয়াহু ডাইরেক্টরি থেকে সার্চ করে ওই দুই দেশের ই-কমার্সের সাইটের তথ্য ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করবে। আর আরেকটি প্রোগ্রাম ডাটাবেইজ থেকে লিংক নিয়ে একটি একটি করে সাইটে যাবে এবং ওই সাইটে কোন সিকিউরিটি সিল আছে কিনা যাচাই করে দেখবে। প্রোগ্রামটি তৈরি করার পর আমি আমার সার্ভারে Cron Job এর মাধ্যমে দুটি প্রোগ্রামকে চালাই।
মজার কথা হচ্ছে আমাদের এই পদ্ধতি সফল হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে সব কিছু সহ করতে আমাদের দুই দিন সময় লেগেছিল এবং প্রোগ্রামটির মাধ্যমে অল্প সময়ে আমারা ৮,০০০ সাইটে সার্চ করে ৪,০০০ টি সিলবিহীন সাইট পেয়েছিলাম। প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক লিংক পেয়ে ক্লায়েন্টও মহা খুশি। অন্যদিকে আমার সময় এবং অর্থ দুটিই সাশ্রয় হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন